গরু পাচারে জড়িত বিএসএফ সদস্যদের অঢেল সম্পত্তির হদিস
বাংলাদেশে গরু পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিপুল সম্পত্তির হদিস পেল সিবিআই। রীতিমতো চমকে ওঠার মতো সম্পত্তি বানিয়েছেন অভিযুক্তরা।
বাংলাদেশে গরু পাচারের দায়ে অভিযুক্ত বিএসএফ অফিসার ও পাচারকারীর সম্পত্তির বিবরণ দেখে অবাক সিবিআই অফিসাররা। বিএসএফের অভিযুক্ত অফিসারের নাম সতীশ কুমার। তার সল্টলেকে একটি বাড়ি আছে। গাজিয়াবাদে আছে তিনটি বাড়ি এবং দুইটি জমি। অমৃতসরে বাগানবাড়ি। এ ছাড়া উত্তরাখণ্ডে মনোরম পর্যটনকেন্দ্র, মুসৌরিতে একটি হোটেলের মালিকও তিনি। এখানেই শেষ নয়, শিলিগুড়ি এবং ছত্তিশগড়ের রায়পুরেও তাঁর জমি ও বাড়ি আছে। হবে নাই বা কেন, একটা গরু পিছু তিনি দুই হাজার টাকা পেতেন বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ সত্যি হলে দিয়ে-থুয়েও হাতে অনেকটাই থাকার কথা। আর হাজারে হাজারে গরু পাচার হয়। ফলে অভিযুক্তদের হাতে যে অঢেল টাকা থাকবে তা বোঝাই যাচ্ছে।
পাচারকারী এনামুল হকও পিছিয়ে নেই, বরং তার সম্পত্তি আরো বেশি। তার একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৩০ কোটি টাকার হদিশ পেয়েছে সিবিআই। অন্য অ্যাকাউন্টে আছে ১০ লাখ ডলার। এ ছাড়াও তার আরো অ্যাকাউন্ট ও বেনামে সম্পত্তি থাকতে পারে। তার সঙ্গী সাথীদের হাতেও প্রচুর টাকা। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, গরু পাচারের সঙ্গে কী বিশাল পরিমাণ টাকা জড়িয়ে আছে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ২,২১৬ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারা দেয়ায় নিয়োজিত প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় সৈন্যকে নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ সেটা হলো, ভারতীয় গরু যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশে পৌঁছতে না পারে৷ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএসএফ সদস্যদের এই নির্দেশ দেন যেন ‘বাংলাদেশের মানুষ গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয়’৷
সিবিআইয়ের ধারণা, এটা শুধু সতীশ কুমার ও এমানুল হকের কাজ নয়। এর সঙ্গে বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরও জড়িত থাকার সম্ভাবনা আছে। তবে তারা কারা সে সম্পর্কে সিবিআই অফিসাররা মুখ খোলেননি। তবে তাঁরা মনে করছেন, শুধু গরু নয়, সোনা ও মাদক পাচারের সঙ্গেও পাচারকারীরা যুক্ত থাকতে পারে।
সিবিআই মাঝখানে দুই বছর তদন্ত করতে পারেনি। কারণ ২০১৮ সালের শেষের দিকে রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্তের ‘জেনারেল কনসেন্ট’ প্রত্যাহার করে নেয়। সম্প্রতি হাইকোর্ট রায়ে বলেছে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গেলে সিবিআইয়ের কোনো অনুমতির দরকার নেই। সেই সূত্রেই গরু পাচার ও বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং লোকসভায় বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী ফেসবুকে অভিযোগ করেছেন, ‘রাজ্যের পুলিশ ও শাসক দলের মদত ছাড়া গরু পাচার হতে পারে না। গরু তো মানিব্যাগে ভর্তি হয়ে আসেনি। এসেছে ট্রাক ভর্তি হয়ে।’ অধীরের দাবি, ‘পুলিশ ও নেতাদের কার কত রেট তা মুর্শিদাবাদের মানুষ জানেন। তাঁরা এও জানেন, যে দল ক্ষমতায় থাকে, পাচারকারীদের কাছে তাদের খুব কদর।’ বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের দাবি, ‘গরু পাচারের টাকা সন্ত্রাসবাদের কাজে লাগে।’
সূত্র: ডয়েচে ভেলে।