স্বীকারোক্তি এবং ফিরে আসা : আসল দায় কার?
ফৌজদারি বিচার-পদ্ধতিকে একটি নিয়মতান্ত্রিক অবস্থায় আনার জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৮৯৮ সালে The Code of Criminal Procedure আইন পাস করে ছিল, যার ছোট কিছু সংশোধনী ছাড়া পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকার মূল আইনকে অটুক রেখেছে। পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট পদ-পদবি ব্রিটিশের সৃষ্টি এবং ওই আইনটি কার্যকর করার ৩৭ বছর আগে The Police Act 1861 ১৮৬১ ব্রিটিশ ভারতে কার্যকর হয়। এই দু’টি আইনেই পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটকে যথেষ্ট ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে ১১৬-ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে বিচারকর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিরা এবং ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন’। বিচারিককার্যে ম্যাজিস্ট্রেটদের যথেষ্ট বিচারিক স্বাধীনতা দেয়া সত্ত্বে¡ও তারা গণমানুষের প্রতি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পুলিশের মতোই সরকারের আজ্ঞাবহ একটি বাহিনীতে পরিণত হয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশের যেকোনো বক্তব্যকেই ম্যাজিস্ট্রেটরা কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই মূল্যায়ন করেন বিধায়ই স্বীকারোক্তি আদায়ে পুলিশ আজ নিয়ন্ত্রণহীন।
পুলিশ সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকেই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। জনতাকে দাবিয়ে রাখার জন্য সরকার পুলিশ/ম্যাজিস্ট্রেটদের একটি বৈধ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। পাকিস্তান সরকার ছাড়াও স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার অনেকগুলো কঠিন আইন প্রণয়ন করেছে, যা প্রয়োগের জন্য পুলিশ/ম্যাজিস্ট্রেটরাই দায়িত্ব প্রাপ্ত।
বিচারিক ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল করার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় একজন তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্তের স্বার্থে যেকোনো ব্যক্তির মৌখিক জবানবন্দী রেকর্ড করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তবে যে সব প্রশ্নের উত্তর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ফৌজদারি অভিযোগ, সাজা বা বাজেয়াপ্তির দিকে টেনে নিতে পারে সেসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া ব্যতীত ওই ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ঘটনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জবাব দিতে বাধ্য। এ ছাড়াও পুলিশ কর্তৃক রেকর্ডকৃত জবানবন্দীতে জবানবন্দী দানকারী স্বাক্ষর দিতে বাধ্য নন এবং জবানবন্দীর ওপর স্বাক্ষর দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পুলিশ চাপ, জোর বা বাধ্য করতে পারবে না। পুলিশ কর্তৃক গৃহীত জবানবন্দী সাক্ষ্য আইন অনুুযায়ী, আদালতে ‘সাক্ষ্য’ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে বিচারকাজে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে, যার বিচারিক মূল অনেক দুর্বল। ওই আইনের ১৬৪ ধারায় প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এবং সরকারের বিশেষ ক্ষমতাক্রমে দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটকে কোনো ব্যক্তির জবানবন্দী এবং দোষ স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার জন্য ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। ওই আইনের ৩৬৪ ধারায় প্রদত্ত বিধানবালি প্রতিপালন করে ম্যাজিস্ট্রেটকে রেকর্ডিং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
পাঠকের সুবিধার্থে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারাটি হুবহু নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
জবানবন্দী এবং দোষ স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধকরণের ক্ষমতা
১. কোনো মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, কোনো প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এবং এ বিষয়ে সরকার দ্বারা বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট, তিনি যদি পুলিশ অফিসার না হন, এ অধ্যায়ের অধীন কোনো তদন্তের সময় বা অনুসন্ধান বা বিচার শুরু হওয়ার পূর্বে ও পরবর্তী পর্যায়ে যেকোনো সময় তার কাছে দেয়া কোনো বিবৃতি বা দোষ স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করিতে পারিবেন।
২. সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করার জন্য অতঃপর যেসব পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে যে পদ্ধতিকে তিনি ঘটনার অবস্থায় উপযুক্ত বলে মনে করেন, সেই পদ্ধতিতে তিনি এরূপ বিবৃতি লিপিবদ্ধ করিবেন। এরূপ দোষ স্বীকারোক্তি ৩৬৪ ধারায় উল্লিখিত পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ ও স্বাক্ষরিত হবে এবং অতঃপর যে ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনা সম্পর্কে অনুসন্ধান বা বিচার করিবেন, এরূপে লিপিবদ্ধ বিবৃতি বা দোষ স্বীকারোক্তি তার নিকট প্রেরণ করতে হবে।
৩. এইরূপ দোষ স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করিবার পূর্বে ম্যাজিস্ট্রেট স্বীকারোক্তি দানকারীকে বুঝাইয়া দিবেন যে, তিনি স্বীকারোক্তি করিতে বাধ্য নহেন এবং তিনি যদি স্বীকারোক্তি করেন, উহা হইলে তাহার বিরুদ্ধে উহা সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হইতে পারে এবং স্বীকারোক্তিকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া উহা স্বেচ্ছামূলকভাবে করা হইতেছে বলিয়া যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস না করা পর্যন্ত কোন ম্যাজিস্ট্রেট এইরূপ কোন দোষস্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করিবেন না এবং যখন তিনি কোন দোষস্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করিবেন, তখন উক্ত লিপির পাদদেশে নিম্নোক্ত মর্মে এই স্মারক মন্তব্য লিপিবদ্ধ করিবেন-
‘আমি, অর্থাৎ (ম্যাজিস্ট্রেট) (নাম) অর্থাৎ (সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি) কে বুঝাইয়া দিয়াছি যে, তিনি দোষস্বীকার করিতে বাধ্য নহেন এবং যদি তিনি উহা করেন, তাহা হইলে দোষ স্বীকারোক্তি তাহার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহ্নত হইতে পারে এবং আমি বিশ্বাস করি যে, এই দোষ স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে করা হইয়াছে। ইহা আমার উপস্থিতিতে ও শ্রবণে করা হইয়াছে এবং স্বীকারোক্তিকারীকে ইহা পড়িয়া শুনানো হইয়াছে এবং তিনি উহা নির্ভুল বলিয়া স্বীকার করিয়াছেন এবং তিনি সে বিবৃতি দিয়াছেন, উহাতে তাহার পূর্ণাঙ্গ ও সত্য বিবরণ রহিয়াছে।’
(ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর তারিখসহ)
সরকারের বদান্যতায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। তাদের কাছে সরকার নিজেও অসহায়। কারণ গায়েবি মোকদ্দমা ও রিমান্ড বাণিজ্যের মাধ্যমে বিরোধী দলকে এলাকা ছাড়া করে দিয়ে একতরফা নির্বাচন করার কারণ ছাড়াও পুলিশকে নিয়ন্ত্রণে রাখার বিধিবদ্ধ আইন বা পদ্ধতি কোনো সরকারই করতে পারেনি। ধারণাটা এ রকম যে, পুলিশ ছাড়া সরকার চলে না। পুলিশ নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো বা কাউকে ফাঁসানো তাদের জন্য কোনো ব্যাপারই নয়। ফলে পুলিশ ক্ষমতার চরম শিখরে আরোহণ করে এবং কথায় বলে, ‘বাঘে ছুলে এক ঘা এবং পুলিশে ছুঁইলে আঠারো ঘা।’
একুশে আগস্ট বোমা হামলায় পুলিশ জজমিয়া নাটক সাজিয়ে জাতিকে দু’টুকরা করে দিয়েছে যার সমীকরণ রক্তের দাগ না শুকানো পর্যন্ত উপসংহার টানা যাচ্ছে না। খরস্রোতা নদী শুকিয়ে গেলেও রক্তের দাগ শুকায় না। পুলিশের কারসাজিতে মিথ্যা দোষ স্বীকারোক্তির কারণে অনেক ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়েছে যাতে অনেক দোষী ব্যক্তি বেঁচে গিয়ে নির্দোষ ব্যক্তি সাজা খাটছে। এখন প্রশ্ন হলো মিথ্যা স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করার অপরাধে কি শুধু পুলিশ দায়ী? এখানে ম্যাজিস্ট্রেটের কি কোনো দায়দায়িত্ব নেই?
অতিসম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে তিন আসামির রেকর্ডকৃত দোষ স্বীকারোক্তির জবানবন্দী পর্যালোচনা করলেই পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কর্তব্যজ্ঞান এবং পেশাগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাঠকের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
মিডিয়াতে প্রকাশ, ‘নারায়ণগঞ্জে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ শেষে শ্বাস রোধ করে হত্যার পর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে মর্মে তিন আসামি আদালতে চাঞ্চল্যকর জবানবন্দী দেয়ার পর সেই স্কুলছাত্রী জীবিত ফিরে এসেছে। জিসা মনি (১৫) নামে পঞ্চম শ্রেণীর ওই স্কুলছাত্রীর লাশটি যেন অন্তত পায়, তার জন্য অপেক্ষায় ছিল পরিবার। স্কুলছাত্রী হত্যার বিচার চেয়ে পোস্টারিংও করেছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু নিখোঁজ হবার ৫১ দিন পর সেই স্কুলছাত্রী জীবিত ফিরেছে মা-বাবার কাছে। ৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন আসামিরা। পুলিশ তখন বলেছিল-আসামিরা স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী জিসাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীতে। আসামিদের বরাত দিয়ে ওই সময় পুলিশ জানায়, স্বীকারোক্তি দিয়েছে জিসা হত্যা মামলার তিন আসামি আবদুল্লøাহ, রকিব ও খলিলুর রহমান। আদালতের নির্দেশে তারা এখন জেলখানায় বন্দী। আসামি গ্রেফতারের পর পুলিশ জানায়, বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আটক করা হয় অটোরিকশাচালক রকিবকে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আনা হয় থানায়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৬ আগস্ট অপহরণ মামলা করা হয়েছে থানায়। অতঃপর আটক করা হয় আবদুল্লাহকে। এরপর রকিব ও আবদুল্লাহকে দুই দিনের রিমান্ডে আনা হয়। এরপর নতুন তথ্য পাওয়া যায় আবদুল্লাহর কাছ থেকে। ইস্পাহানি ঘাট থেকে জিসাকে নিয়ে আবদুল্লøাহ একটি ছোট বৈঠাচালিত নৌকা ভাড়া করেছিল রাত আনুমানিক ৯টায়। ১২টার মধ্যে জিসাকে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়েছিল শীতলক্ষ্যাতে, সাহায্য করেছিল মাঝি খলিল।’
মিডিয়াতে আরো প্রকাশ পায়, ‘তাদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, মোবাইলে কথা হতো আবদুল্লাহর। আর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে রাত ৯টায় ইস্পাহানি ঘাটে যায় তারা। রকিব তাদের নামিয়ে দিয়ে চলে আসে। নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে একসময় আবদুল্লাহ ঝাঁপিয়ে পড়ে জিসার ওপর। নিজেকে রক্ষা করতে প্রাণপণে চেষ্টা করে জিসা, পেরে ওঠে না আবদুল্লাহ। সাহায্য করে মাঝি খলিল। তারপর রক্তাক্ত দেহে আবার ধর্ষণ করে মাঝি খলিল। যন্ত্রণায় কাতর জিসা শুধু বলে-বাড়িতে গিয়ে সব বলে দেবে, ভয় পেয়ে যায় ধর্ষকরা। জিসার গলা টিপে ধরে আবদুল্লাহ আর পা চেপে রাখে খলিল। একসময় নিস্তেজ হয়ে যায় জিসার দেহ। স্রোতস্বিনী শীতলক্ষ্যা নদীতে জিসার লাশ ফেলে পালিয়ে যায় তারা।’ (জাতীয় পত্রিকা, ২৫ আগস্ট ২০২০)
স্কুলছাত্রী জিসামনি কোনো কারণে যদি স্বেচ্ছায় ধরা না দিত বা বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগে ফিরে না আসত তবে এই কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় রেকর্ডকৃত দোষ স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করেই আসামিদের নির্ঘাত ফাঁসি হয়ে যেত এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার রেকর্ডে জমা হতো একটি সাফল্যের ম্যান্ডেট। দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা ছাড়াও নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের আওতায় বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এ বিচারকার্য সম্পাদন হতো। মিডিয়া বিচারের রায় শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে যেত, ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিজের আদালতে ট্রায়াল করার সময় মিডিয়া ট্রায়ালের দিকেও তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন, অবশ্যই।
কিন্তু কী অবস্থা এখন দাঁড়াল? প্রমাণিত হলো পুলিশ কর্তৃক মঞ্চস্থ দোষ স্বীকারোক্তির মিথ্যা নাটকের যবনিকা টেনেছেন ম্যাজিস্ট্রেট। ম্যাজিস্ট্রেসি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিচারিক দায়িত্ব। আইনের বিধান বলে, আসামির দেয়া দোষ স্বীকারোক্তি সত্য, প্রভাবমুক্ত এবং স্বেচ্ছায় দিচ্ছে কি না এ বিষয়টি প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেটকে নিশ্চিত হতে হবে। আসামিকে ন্যূনতম তিন ঘণ্টা সময় দিয়ে তাকে বুঝতে হবে, সে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য নয়। স্বীকারোক্তি না দিলে তাকে পুনরায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা বা রিমান্ডে দেয়া হবে না মর্মে আসামিকে নিশ্চয়তা দিতে হবে। আসামির গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন আছে কি না বা পুলিশ হেফাজতে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য কোনো প্রকার শারীরিক নির্যাতন, ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে কি না এ বিষয়টিও ম্যাজিস্ট্রেটকে নিশ্চিত হতে হবে। মোট কথা, একটি প্রভাবমুক্ত, স্বেচ্ছা প্রণোদিত এবং সত্য স্বীকারোক্তি নিশ্চিত করার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব আইন মোতাবেক ম্যাজিস্ট্রেটের ওপরেই বর্তায়।
এখন প্রশ্ন হলো- ওই তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করার সময় সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটদ্বয় যথা নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবীর কি যথাভাবে আইনে প্রদত্ত বিধানাবলি প্রতিপালন করেছেন? একজন ম্যাজিস্ট্রেট ‘হাবাগোবা’ ধরনের মানুষ হলে ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ নামক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা হবে না। ম্যাজিস্ট্রেটকে হতে হবে বিচক্ষণ, দায়িত্বশীল এবং যেকোনো ঘটনাকে অনুধাবন করার মতো মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রায়ই ম্যাজিস্ট্রেটরা পুলিশের শেখানো বক্তব্যকেই তাকে রেকর্ড করে একটি বানোয়াট সার্টিফিকেট দিয়ে দায়িত্ব সম্পন্ন করছেন। এমতাবস্থায়, ন্যায়বিচারের স্বার্থে ম্যাজিস্ট্রেটদ্বয়কেও জবাবদিহিতায় আনা হোক।
বর্ণিত ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিলে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করার সময় তারা নিষ্ঠার সাথে আইনে পদত্ত বিধানাবলি কাগজে কলমে নয় বরং মনমস্তিষ্ক দিয়ে প্রতিপালন করবেন এবং পুলিশের সাজানো নাটকের যবনিকা টানার খলনায়কে পরিণত হবেন না। ম্যাজিস্ট্রেটদের পুলিশের মতো অদায়িত্বশীল খলনায়ক হিসেবে জাতি দেখতে চায় না। হ
লেখক : রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী
(অ্যাপিলেট ডিভিশন)