৩ আসামিকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে জবানবন্দি নেয় আইও

0

নারায়ণগঞ্জ আলোচিত স্কুলছাত্রী দিসা মনি অপহরণ মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে থাকা আসামির স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, দিসা মনি অপহরণ এবং ধর্ষণ ও হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়ার ঘটনা সাজানো। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জে কিশোরী অপহরণ মামলায় গ্রেফতার তিন আসামিকে জোরপূর্বক জবানবন্দি আদায় করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা এস আই শামীম আল মামুন।

স্কুলছাত্রী দিসা মনিকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা প্রত্যাহার করে আসামিদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী জেলা আদালত প্রাঙ্গনে মানববন্ধনে এ অভিযোগ করেন আসামিপক্ষের স্বজনরা।

এছাড়া এ ঘটনায় সদর থানার ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তা এবং দিসার স্বামী ইকবালসহ চার আসামিকে সোমবার আদালতে তলব করা হয়েছে।

স্বজনদের অভিযোগ, দিসা মনি অপহরণ মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এস আই (প্রত্যাহারকৃত) শামীম আল মামুন ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক আসামিদের দিয়ে মিথ্যা জবানবন্দি আদায় করেছেন। দিসা মনি ফিরে আসার পর বাদিপক্ষ মামলা তুলে নেয়ার কথা বললেও পুলিশের কথায় তারা মামলা তুলে নেননি। অতি সত্ত্বর মামলা তুলে নেয়ার দাবি জানান আসামির স্বজনরা।

আসামি নৌকার মাঝি খলিলের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, বিনা দোষে আমার স্বামী জেল খাটছে। মেয়েকে তো পাওয়া গেছে। তারপরও কেন আমার স্বামীসহ নিরাপরাধ তিন জনকে আটকে রেখেছে? এ মামলা তুলে নেয়ার দাবি জানাই।

আসামি আব্দুল্লাহর বাবা আমজাদ হোসেন বলেন, আমার ছেলের বয়স কম। মাইরের চোটে পুলিশ যা কইছে তাই জবানবন্দি দিছে। কাউরে মাইরা ফেললে সে আবার ফেরত আসে কেমনে? মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।

মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন আব্দুল্লাহর মা শিউলী বেগম, রকিবের বোন জামাই আতাউর রহমানসহ আসামিদের স্বজন ও শতাধিক এলাকাবাসী।

এদিকে দিসা মনি বেঁচে থাকলেও তিন আসামি কেন ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে, তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে মামলার এজাহার ও জবানবন্দির নথিপত্রসহ তাদের সশরীরে উপস্থিত হয়ে ওসি ও আইওকো এর ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতের বিচারক কাওছার আলম এ আদেশ দেন।

পাশাপাশি আগামী সোমবার এ মামলায় গ্রেফতার চার আসামির একত্রে জামিন ও রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলেও আদেশ দেন আদালতের বিচারক।

ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

গত ৪ জুলাই স্কুলছাত্রী দিসা মনি (১৫) নিখোঁজ হয়। এক মাস পর ৬ আগস্ট একই থানায় স্কুলছাত্রীর বাবা অপহরণ মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বন্দর উপজেলার বুরুন্ডি খলিলনগর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২২) ও তার বন্ধু বুরুন্ডি পশ্চিমপাড়া এলাকার সামসুদ্দিনের ছেলে রকিবকে (১৯)। ওই দিনই তাদের গ্রেফতার করা হয়। একই ঘটনায় দুই দিন পর গ্রেফতার করা হয় বন্দরের একরামপুর ইস্পাহানি এলাকার বাসিন্দা নৌকার মাঝি খলিলকে (৩৬)।

গত ৯ আগস্ট পুলিশ জানায়, স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয় আসামিরা। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় এ ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। পরে ২৩ আগস্ট দুপুরে বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ রেললাইন এলাকায় জীবিত অবস্থায় ফিরে আসে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী দিসা মানি। সে তার পরিবারকে জানায়, বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ইকবাল নামের এক যুবককে তিনি বিয়ে করেছেন। পরে ইকবালকে পুলিশ গ্রেফতার করে সেই অপহরণ মামলায় আসামি হিসেবে যুক্ত করে পুলিশ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com