মহররম ও আশুরা: যা করবেন, যা করবেন না

0

মাসের গণনা মানুষের সৃষ্টি নয়। বছরের ১২ মাসের গণনা আল্লাহর বিধান। তিনি ইরশাদ করেন- ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে মাসের সংখ্যা ১২টি।’ (সূরা তাওবাহ-৩৬)

১২ মাসের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা চারটি মাসকে সম্মানিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তন্মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ ও সম্মানিত। এটা সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।’ (সূরা তাওবাহ-৩৬)

নিষিদ্ধ চার মাস নির্ধারণ করে নবী সা: ইরশাদ করেছেন- ‘নিশ্চয়ই জামানা আসমান জমিন সৃষ্টির দিন থেকেই তার আপন অবস্থায় ঘূর্ণায়মান। বছর হলো ১২ মাস। তন্মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ ও সম্মানিত। চার মাসের তিনটি হলো ধারাবাহিক তথা জিলকদ, জিলহজ, মহররম। আরেকটি হলো জুমাদাল উখরা ও শাবানের মাঝখানে রজব।’ (সুনানে আবু দাউদ-১৯৪৭)

বর্তমান মাসটি হলো মহররম। আল্লাহর দেয়া সম্মানিত মহররম মাস আমরা অতিক্রম করছি। সুতরাং এই মাসের সম্মান রক্ষায় আমাদের কিছু করণীয় ও বর্জনীয় আছে। এখানে মহররম ও আশুরাকেন্দ্রিক কিছু করণীয় ও বর্জনীয় আলোচনা করা হলো-

১. অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখা। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।’ (মুসলিম-২৬৪৫)

২. বিশেষভাবে আশুরা তথা মহররমের ১০ তারিখের রোজা রাখা। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘আশুরার একদিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে এই আশা করি যে, তিনি এ রোজার উছিলায় বান্দার আগের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (মুসলিম-১১৬২)

৩. সব ধরনের গুনাহ বর্জন করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘এই চার মাসের মধ্যে তোমরা (গুনাহ করে) নিজেদের প্রতি জুলুম করো না।’ (সূরা তাওবাহ-৩৬)

৪. বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করা। এমনকি জিহাদের প্রয়োজন দেখা দিলে জিহাদের জন্যও ময়দানে ছুটে যাওয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মক যুদ্ধ করবে, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ করে থাকে। জেনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে আছেন।’ (সূরা-তাওবাহ-৩৬)

৫. প্রচলিত মাতম মর্সিয়া পরিহার করা। প্রতি বছর আশুরা এলে আমাদের সমাজে অনেক কুসংস্কারের মধ্যে অন্যতম একটি কুসংস্কার পরিলক্ষিত হয়। তা হলো- মাতম মর্সিয়া গাওয়া। আর মর্সিয়া মানে নবী দৌহিত্রের শোক প্রকাশে নিজের শরীরে আঘাত করা এবং জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা। ইসলামে এটা নিষিদ্ধ। নবী সা: এ ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন- ‘যে ব্যক্তি (শোকে-দুঃখে) চেহারায় চপেটাঘাত করে, জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলি যুগের মতো হায়-হুতাশ করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (বুখারি-১২৯৭)

৬. জীবনের সব ক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন থেকে বেঁচে থাকা। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: যখন আশুরার দিন সিয়াম পালন করেন এবং অন্যদের সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন তখন সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইহুদি এবং নাসারারা এদিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা মহররমের ৯ তারিখেও সিয়াম পালন করব। বর্ণনাকারী বলেন, এখনো আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সা: ইন্তেকাল করেন।’ (মুসলিম-২৫৫৬) এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, নবী সা: আমাদের অন্য জাতির সাদৃশ্য থেকে বাঁচতে শিক্ষা দিয়েছেন। তাই প্রথমত আমাদের আশুরার রোজা একটির পরিবর্তে দুটি রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনের সব ক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন পরিহার করতে হবে।

৭. আশুরার দিন বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মহররম আল্লাহর মাস। এই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে যেদিন তিনি অতীতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন।’ (তিরমিজি-৭৪১) তাই ক্ষমা পাওয়ার আশায় এদিন বেশি বেশি ইস্তেগফার করা চাই।

৮. ‘আশুরার দিনের গুরুত্ব বোঝাতে মিথ্যা ও বানোয়াট জাল হাদিস বলা থেকে বিরত থাকা। কেননা হাদিসে মিথ্যা সংযোজনকারীকে জাহান্নামে ঠিকানা বানিয়ে নিতে বলা হয়েছে।’ (বুখারি-১০৭)

৯. আশুরাকেন্দ্রিক সমাজে প্রচলিত সকল কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকা। কেননা, কুসংস্কারে বিশ্বাস করা ভীষণ পাপ ও ভ্রষ্টতার কারণ। আর আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘পথভ্রষ্ট লোক আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ থাকে।’ (সূরা হিজর-৫৬)

১০. আশুরাকেন্দ্রিক প্রচলিত সব ভুল বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকা। তন্মধ্যে একটি হলো- আশুরার দিন কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ধারণা। এটা ভুল। কেননা, এ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো বিশুদ্ধ কোনো সনদে বর্ণিত হয়নি। সবগুলো বর্ণনা জাল সূত্রে বর্ণিত। তাই এ ধারণা পরিহার করা জরুরি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে বিশুদ্ধ দ্বীন মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com