মুহররমের অজানা দুই নির্দেশ ও ফজিলত
সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য, যিনি দয়া করে বিশ্ববাসীর জন্য ১৪৪২ হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মুহররম দান করেছেন। কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে এ মাসের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দুটি নির্দেশ, তাৎপর্য ও ফজিলত। মুসলিম উম্মাহর অনেকেই এ সব নির্দেশ, ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে অবগত নয়।
আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত ৪ হারাম মাসের একটি মহররম। এ মাসের তাৎপর্য, ফজিলত ও করণীয় নিয়ে রয়েছে ইসলামের দিকনির্দেশনা। কুরআনুল কারিমে ৪টি মাস সম্মানিত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তন্মধ্যে মহররম একটি। আল্লাহ তাআলা হলেন-
‘নিশ্চয় আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সঙ্গে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৩৬)
কুরআনে ঘোষিত সম্মানিত চারটি নিষিদ্ধ মাস কোনটি? এ সম্পর্কে হাদিসে সুস্পষ্ট বর্ণনা এসেছে-
হজরত আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিনটি হলো ধারাবাহিক মাস- জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আর একটি হলো রজব মাস। জমাদিউস সানি ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস অর্থাৎ রমজানের আগের মাসের আগের মাস।’ (বুখারি)
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে এ চারটি মাসকে সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ যে মাসগুলোকে সম্মানিত মাস বলে অভিহিত করেছেন, সে মাসগুলোকে মর্যাদা দেয়া মুমিন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। এর মধ্যে অন্যতম দুটি নির্দেশ হলো-
> মহররমকে সম্মান দেখানো
আল্লাহ তাআলার কাছে যে মাসগুলো সম্মানিত, সে মাসগুলোকে সম্মান দেখানো মুমিনের প্রথম কাজ। মহররমসহ এ মাসগুলোতে আল্লাহর দেয়া সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা প্রত্যেক ঈমানদারের প্রথম করণীয়।
আফসোসের বিষয়
মুমিন মুসলমানের অনেকেই জানেন না যে, ইসলামের সম্মানিত মাস কোনগুলো। মানুষ যখন জানবে যে এ মাসগুলো সম্মানিত। তখন মানুষের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হবে যে, আসলেই এটি মহররম মাস। এ মাসের যাবতীয় পাপাচার নিষিদ্ধ। তাই সস্মানিত মাসগুলো সম্পর্কে যেমন জানা জরুরি। তেমনি হারাম মাসের ইবাদত ও আমল সম্পর্কে ধারণা নেয়া জরুরি।
সুতরাং মুসলিম হিসেবে প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের এ বিষয়গুলো জেনে সম্মানিত ৪ হারাম মাস সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। হারাম মাসের সম্মান দেখানোর পাশাপাশি এ মাসে যাবতীয় পাপাচার থেকে বিরত থাকা মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট নির্দেশ।
> পাপাচারমুক্ত থাকা
আল্লাহর দেয়া সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে মহররমসহ সম্মানিত ৪ মাসের দুনিয়ার যাবতীয় পাপাচার থেকে মুক্ত থাকা মুমিন মুসলমানের দ্বিতীয় কাজ। তবেই জীবনের বাকি সময়গুলো এ মাসের অনুসরণ ও অনুকরণে গোনাহমক্ত থাকা সহজ হবে।
সতুরাং মহররমসহ উল্লেখিত মাসগুলোতে নিজেদের প্রতি অবিচার বা কোনো ধরণের পাপাচার না করাই উত্তম। আল্লাহ তাআলা এ মাসগুলোর করণীয় সম্পর্কে ঘোষণা করেন-
‘এ (মাসের) মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি কোনোরূপ অত্যাচার করো না।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৩৬)
আয়াতের ব্যাখ্যা তাফসির বিশারদগণ বলেছেন, অত্যাচার বলতে এখানে যে কোনো ধরণের পাপাচার করাকে বুঝানো হয়েছে। তাই এ মাসের পাপাচার না করাই কুরআনে নির্দেশিত সেরা অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আমল।
এমনিতে অন্যান্য মাসে গোনাহের কাজ করা মুমিন মুসলমানের জন্য জঘন্য কাজ। আর সম্মানিত চার মাস জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব মাসের পাপাচার করা দ্বিগুণ মারাত্মক অন্যায় ও সরাসরি মহান আল্লাহর নির্দেশের লঙ্ঘন।
> সাওয়াবের কাজে প্রতিযোগিতা করা
সাওয়াব ও ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করা এ মাসের তৃতীয় কাজ। ইসলামিক স্কলারদের মতে, সম্মানিত ৪ মাসের মধ্যে মহররম মাসই শ্রেষ্ঠ। তাই এ মহররম মাসে গোনাহ ছেড়ে দেয়ার পাশাপাশি যেসব কাজে সাওয়াব ও উপকারিতা রয়েছ, সেসব কাজের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দেয়া খুবই জরুরি। আবার মর্যাদার বিচারে রমজানের পরেই এ মহররম মাসের স্থান। কেননা মহররম শব্দের অর্থই হলো- সম্মানিত।
এ মাসকে সম্মান দেখানোর অন্যতম কারণ
মাসটির নাম ’মহররম’। আর এর অর্থ : সম্মানিত। আর হাদিসেও এ মাসটিকে আল্লাহর মাস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এটি (মহররম) শাহরুল্লাহ তথা আল্লাহর মাস।’ (মুসলিম)
সুতরাং জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব মাস এলে মুমিন মুসলমান নড়েচড়ে বসবে। অর্থাৎ আল্লাহর নিদের্শ পালনে সতর্কতা অবলম্বন করবে। যাবতীয় অন্যায় থেকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে। যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজেদের বিরত রাখবে। কথা ও কাজে, চালচলনে, আমল-ইবাদতে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করাই মুমিনের জন্য এ মাসের অন্যতম দাবি। এ মাসগুলোর অভ্যাসই মুমিন মুসলমানকে বছরের বাকি মাসগুলো সঠিক পথে চলার পথ দেখাবে।
উল্লেখ্য ইতিমধ্যে ১৪৪১ হিজরি শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে ১৪৪২ হিজরি। গেল হিজরি বছরের শেষ দুই মাস ছিল মুমিন মুসলমানের জন্য সম্মানিত মাস। আর এ সম্মানিত মাসের মাধ্যমেই নতুন বছর শুরু হলো।
নতুন হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররমে দুনিয়ার যাবতীয় অনাচার থেকে বিরত থেকে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে কথা ও কাজে প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করা জরুরি। আর তাতে বাকি সম্মানিত তিন মাসসহ পুরো বছর জুড়েই মুমিন মুসলমান যাবতীয় পাপাচার থেকে থাকবে নিরাপদ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যাবতীয় পাপাচার থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করুন। মহররম জুড়ে নামাজ, রোজা ও ভালো কাজে অংশগ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। এ মাসজুড়ে ভালো কাজের মাধ্যমে সব মহামারি ও বিপদ থেকে বিশ্ববাসীকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।