মানুষকে হাসাতে মিথ্যা বলা যাবে কি?
মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য হাসি-খুশি থাকা জরুরি। উত্তম কথা ও মন্দ পরিহার করে হাসি খুশি থাকা যায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এমন অনেক অনুষ্ঠান কিংবা প্রতিযোগিতা দেখা যায়, যেখানে কথা শুনলেই মানুষ হাসতে থাকে। আবার এমন অনেকে আছে, যারা মানুষকে হাসানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন ধরণের কথা বানিয়ে বলে থাকে। মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলা যাবে কি?
মিথ্যা সব পাপের মা। কাউকে বিনোদন কিংবা হাসানোর জন্যও মিথ্যা বলা যাবে না। কারণ মানুষকে হাসানোর জন্য অসংযত কিংবা মিথ্যা কথা বলায় রয়েছে মারাত্মক ও ভয়াবহ পরিণতি। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে তবে তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস।’ (আবু দাউদ)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসব ব্যক্তিদের জন্য ধ্বংসের কথাটি দুই বার বলেছেন। একাধিকবার বলে অপরাধের ভয়াবহতা বুঝিয়েছেন। মানুষকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকার প্রতিও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এক সময় মানুষ বিভিন্ন কিসসা-কাহিনী বলতে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিতো। কিন্তু এখন তো মানুষ কথায় কথায় বিনা বাধায় মিথ্যা বলছে। মনে হয় যেন মিথ্যা বলাটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।
যে ব্যক্তি যত বেশি অসংযত কিংবা মিথ্যা বলতে পারে তাকে তত পরিমাণ চতুর, বুদ্ধিমান মনে করা হয়। অথচ মিথ্যা, চালাকি বা ফাঁকিবাজি যে গোনাহের কাজ এসব মানুষের অন্তর থেকেও উঠে যেতে শুরু করেছে। যার ফলে ব্যক্তি পরিবার ও সমাজে মারাত্মকভাবে এ অভ্যাসে আক্রান্ত হচ্ছে।
মানুষকে হাসানোর জন্য কিংবা বিনোদন দেয়ার জন্য অসংযত কথাবার্তা বা মিথ্যা কথা বলায় গোনাহগারে পরিণত হচ্ছে মানুষ। পরিণামে সমাজে যেমন অশান্তি বিরাজ করছে তেমনি মানুষ উত্তম রিজিক থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
যারা মানুষকে বেহুদা গোনাহের দিকে ধাবিত করে তাদের ব্যাপারে ধিক্কার জানিয়েছে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-
ধীকৃত সে ব্যক্তি! যে কোনো মুমিনের ক্ষতি করে অথবা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে।’ (তিরমিজি)
বানিয়ে বানিয়ে কথা বলা বা মানুষকে অযথা হাসানো মুমিনের ক্ষতি কিংবা তার সঙ্গে চক্রান্তের শামিল। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের যেমন অযথা কথা বা মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকা জরুরি তেমনি অন্যকে হাসানো বা বিনোদন দেয়ার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়া থেকেও বিরত থাকা ঈমানের একান্ত দাবি।
মুমিন মুসলমানের উচিত দুনিয়ার যাবতীয় বেহুদা কথা ও মিথ্যার অভিশাপ এবং গ্লানি থেকে বেঁচে থাকা। মানুষকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করা। আল্লাহর দেয়া জ্ঞানের মর্যাদা করা। অন্তরে পরকালের চিন্তা পোষণ করা। তবেই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হওয়া সম্ভব।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হাসি-খুশি থাকতে মিথ্যার আশ্রয় থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। বেহুদা ও মিথ্যা পরিহারের তাওফিক দান করুন। মিথ্যা কথার মাধ্যমে অন্যকে হাসানোর নিকৃষ্ট কাজ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।