যে বিতর্ক থেকে বিরত থাকতে বলেছেন বিশ্বনবি
তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া-ঝাটি করার মাধ্যমেই অধিকাংশ মানুষ পথভ্রষ্ট হয়। সঠিক পথ থেকে সরে যাওয়া মানুষ অনেক সময় ঈমানহীন হয়ে পড়ে। এ কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে তর্ক-বিতর্ক বা ঝগড়া-ঝাটি করতে নিষেধ করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু উমারা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো জাতি হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার পরে গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হয় না, যতক্ষণ না তারা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। অতপর রাসুলু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনুল কারিমের এ আয়াতটি পাঠ করলেন-
مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلًا – بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ
অর্থাৎ ‘তারা আপনার সামনে যে উদাহরণ উপস্থাপন করে তা কেবল বিতর্কের জন্যই করে থাকে। মূলতঃ তারা হলো এক বিতর্ককারী সম্প্রদায়।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
এ ছাড়াও সত্য জানার পরও যারা শুধু ইচ্ছাকৃত অন্যের ওপর বিজয়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যক্তি, দল, মত, বংশ ইত্যাদি কারণে অন্যায়ভাবে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে, এ সবই গোমরাহি তথা পথভ্রষ্টতা। এ সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
‘শরিয়তে ঐ তর্ককে তিরস্কার করা হয়েছে, যা ইলম ছাড়া অন্যায়ভাবে করা হয়। অথবা সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরও করা হয়। সুতরাং এ বক্তব্য থেকেও বোঝা যায় যে, ঝগড়া-ঝাটি ও অন্যায় তর্ক-বিতর্ক গোমরাহি বা পথভ্রষ্টতার আলামত বহন করে।
তবে তর্ক-বিতর্ক যদি হয় সত্যের সমর্থনে, যে তর্ক-বিতর্কে কোনো অন্যায় কথা বা ঝগড়া হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই না থাকে সে বিতর্ক করা যাবে। তবে তা হবে কুরআনের ভাষায় উত্তম বিতর্ক। ইসলামের পক্ষে সে উত্তম বিতর্ক করার নির্দেশও দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তাআলা বলেন-
ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ – وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ- إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ
‘তোমার রবের পথে (মানুষকে) আহ্বান কর, প্রজ্ঞা এবং সুন্দর উপদেশ বাণীর মাধ্যমে আর তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দরতম পন্থায়। নিশ্চয় তোমার রব সব চেয়ে বেশি জানেন, কে তার পথে থেকে বিচ্যুত হয়েছে।’ (সুরা নাহল : আয়াত ১২৫)
ইসলামের দাওয়াতের চমৎকার দুটি মূলনীতি ফুটে উঠেছে এ আয়াতে কারিমায়। আর তাহলো-
– হেকমত বা প্রজ্ঞাপূর্ণ ভাষায় তথা কুরআন-সুন্নাহর দলিলসহ ইসলামের দাওয়াত পেশ করা।
– সুন্দর ও উত্তম উপদেশ বাণীর মাধ্যমে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেয়া। আর তা হতে পারে কুরআন-সুন্নায় উল্লেখিত সব উৎসাহ, সতর্ক বাণী, জান্নাতের নেয়ামত ও জাহান্নামের ভয়াবহ সতর্কতার নসিহত ও নির্দেশনা।
মনে রাখতে হবে
তর্ক-বিতর্ক মানুষকে গোমরাহিতে নিমজ্জিত করে দেয়। তাই তর্ক-বিতর্কের বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। যখন ইসলাম ও কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক বিতর্ক বা উত্তম নসিহত পেশ করা হবে তখনও সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। যেন ইসলামের কথা বলতে গিয়ে কুরআন-সুন্নাহর বাইরে কোনো অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক না হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহে অযথা তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া-ঝাটি থেকে হেফাজত করুন। ইসলামের জন্য বিতর্কের প্রয়োজন হলে সুন্দরতম পন্থায় তথা নম্রতা, ভদ্রতা, শালীনতা, প্রমাণ উপস্থাপন, ইলম এবং যৌক্তিক বক্তব্য পেশের মাধ্যমে বিতর্ক করে দ্বীনের পথে আহ্বান করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত পথভ্রষ্টতা তথা ধ্বংস থেকে হেফাজত করুন। আমিন।