রমজানই জাকাত দেয়ার সর্বোত্তম সময়
ইসলামের অর্থ ব্যবস্থার অন্যতম খাত হলো জাকাত। মুসলমানদের মধ্যে কেউ সম্পদের মালিক মানেই তিনি জাকাত দেবেন। সম্পদের পবিত্রতা পরিশুদ্ধতা এবং বৃদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রাখতে মুমিন মুসলমান জাকাত দেয়। রমজানে জাকাত দিলে আদায়কারী ও গ্রহীতা উভয়ই বেশি উপকৃত হয়।
জাকাত দেয়ার সুনির্দিষ্ট সময় না থাকলেও রমজানই জাকাত দেয়ার সর্বোত্তম সময়। আর ফেতরা রমজানের মধ্যে দেয়াই উত্তম। কারণ এ সময় যে কোনো দান-সাদকাই অন্য সময়ের তুলনা ৭০ গুণ বেশি। এ জন্য ধনী ও সম্পদশালী ব্যক্তিরা রমজানে দান-সাদকা, জাকাত-ফেতরা আদায়ে খুব বেশি উদ্যোগী হয়।
আবার ইবাদতের মাস রমজানে কাজের পরিধি কমে যায়। দুর্বলতা ও কষ্টের কারণে অভাবি, গরিব-দুঃখী মানুষ ঠিকভাবে রোজগার করতে পারে না। তাই এ মাসে ধনীদের জাকাত-ফেতরা তথা আর্থিক দান-অনুদান গরিবদের জন্য অনেক বেশি উপকারি ও জীবন যাত্রার জন্য বেশ সহায়ক হয়।
ফলে ইসলামের এ বিধানটি এদিকে সহায়-সম্বলহীন মানুষকে সবল ও স্বচ্ছল করে তোলে আবার ধনী-গরিবের মধ্যে তৈরি হয় ভ্রাতৃত্ব ও মায়া মমতার সুসম্পর্ক। রমজানের উভয়ের মাঝে বিরাজ করে এক স্বর্গীয় পরিবেশ।
তাছাড়া সম্পদশালীরা রমজানে দান-সদকা ও জাকাত- ফেতরা প্রদানে উৎসাহিত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো- এক দিকে দানের ৭০ গুণ বেশি নেকি হয়। অন্যদিকে এ মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে যে কোনো নফল ইবাদতের বিনিময় একটি ফরজ ইবাদতের সমান সাওয়াব পাওয়া যায়। জাকাত, ফেতরা ও দান-অনুদানের সাওয়াবের বেলায়ও তাই ঘটে।
মনে রাখা জরুরি-
– জাকাত ধনীর সম্পদকে পবিত্র, পরিশুদ্ধ ও বাড়িয়ে দেয়। ইসলামি শরিয়তে মানুষের প্রয়োজন পূরণের পর যদি নেসাব পরিমান সম্পদ পূর্ণ একবছর কারো কাছে গচ্ছিত থাকে তবে তাকে ওই গচ্ছিত সম্পদের জাকাত দিতে হয়।
– কুরআনে ঘোষিত নির্ধারিত খাতে জাকাত আদায় করা। আল্লাহ বলেন- ‘সাদাকাহ (জাকাত) তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্তআকর্ষণ করা হয় (নওমুসলিম) তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। (সুরা তওবাহ : আয়াত ৬০)
– মহামারি করোনায় আক্রান্তদের সহযোগিতা ও চিকিৎসাসহ এ দুঃসময়ে অভাবগ্রস্ত মানুষকে সহায়তায় রাষ্ট্রীয় কোষাগারেও তা দেয়া যেতে পারে। মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রয়োজনীয় খাতে এ অর্থ খরচের ব্যাপারে বিশ্বের অনেক ইসলামি স্কলারও মত দিয়েছেন।
রমজানে জাকাত আদায়
মুমিনের সঙ্গে হাসি বিনিময়েও রয়েছে সাওয়াব। হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী রমজানে এ হাসি মুখে ভাব-বিনিময়ের সাওয়াবও হবে ৭০ গুন। তাহলে গরিব-অসহায় দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জাকাত-ফেতরা ও দান-অনুদানের সেরা সময়ও এ রমজান মাস।
অন্য দিকে ধনীদের অর্থসম্পদের মধ্যে গরিবের নির্দিষ্ট পরিমাণ অধিকার রয়েছে। অন্যের এ ন্যায্য প্রাপ্য বা হক প্রদান করলেই ধনীদের অবশিষ্ট ধনসম্পদ পবিত্র হয়ে যায়। সম্পদ বৃদ্ধি পায়। রমজান মাসে ধনী লোকেরা দরিদ্রদের জাকাত প্রদানের ফলে উভয় শ্রেণির মানুষের মধ্যে লেনদেন হয় এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। সে কারণেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-
‘জাকাত ইসলামের সেতুবন্ধন।’ (মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মানুষের সব কাজই দেখেন। রমজানের সব ইবাদতও আল্লাহ দেখেন এবং এর নেয়ামতও দান করেন। সাওয়াব দেন ৭০ গুণ বেশি। আল্লাহ তাআলা বান্দার জাকাত প্রদানে অনুগ্রহ দানের ঘোষনা দিয়েছেন একাধিক আয়াতে। আল্লাহ বলেন-
– ‘তোমরা নামাজ আদায় করো এবং জাকাত প্রদান করো। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য আগে পাঠবে তা আল্লাহর কাছে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখছেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১১০)
– ‘তোমরা নামাজ আদায় করো, জাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো।’ (সুরা নুর : আয়াত ৫৬)
– ’আর যারা নামাজ আদায় করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদের মহাপুরস্কার দেবো।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৬২)
সুতরাং প্রত্যেক ধনী ও সম্পদশালীর উচিত, জাকাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইসলামের অন্যতম একটি ফরজ ইবাদত যথাযথ আদায়ের মাধ্যমে কুরআনের ঘোষণায় নেয়ামত, বরকত, অনুগ্রহ ও মহাপুরস্কার লাভের চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সম্পদশালী ও ধনীদের রমজানে জাকাত আদায় করে অফুরন্ত সাওয়াব ও ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন। গরিব-অসহায়দের মুখে হাসি ফোটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।