অসুস্থতায় রোজার বিধান

0

আল্লাহপাকের অপার কৃপায় আমরা মাগফিরাতের দশকের রোজা অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক, বুদ্ধিমান, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সমগ্র মুসলমান নারী-পুরুষদের ওপর রমজানের রোজা রাখা আল্লাহ তাআলা ফরজ করেছেন।

ইসলাম এমন এক ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা যার মাঝে কোনো কঠোরতা এবং বাড়াবাড়ি নেই। ইসলাম মানুষের ফিতরত এবং চরিত্রের দিকে দৃষ্টি রেখে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। আল্লাহ তাআলা তার বান্দার ওপর এমন কোনো বিধি-নিষেধ অর্পন করেননি যা পালন করা তার জন্য সাধ্যাতিত।

এছাড়া ইসলামের প্রত্যেক বিধি-নিষেধ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ সুন্নাত দ্বারা আমল করে দেখিয়েছেন। রোজা সম্বন্ধেও আল্লাহ তাআলার যে নির্দেশমালা তা মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে নিজে এর ওপর আমল করেছেন তারপর আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ পেয়ে মুসলিম উম্মাহকে আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

হাদিস পাঠে জানা যায়, রোজার দিনগুলোতে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ বা সফরে থাকলে রোজা রাখতেন না। সফর বা অসুস্থতার কারণে ছেড়ে দেয়া রোজগুলো বছরের অন্যান্য দিন পূর্ণ করতেন।

কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে, কিছু এমন প্রকৃতির মানুষ আছেন যারা কুরআন হাদিসের বিধিবিধান ছেড়ে দিয়ে নিজের ওপর এমন কষ্টকর বোঝা চাপিয়ে নেয় যা ইসলাম বিরোধী।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বিশেষ কিছু অবস্থায় রোজা রাখতে বারণ করেছেন, যেমন সফরে অথবা অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখা নিষেধ।

এছাড়া শিশুদের, গর্ভবতীদের এবং স্তন্যদানকারী নারীদেরও রোজা না রাখার নির্দেশ রয়েছে। স্তন্যদানকারী নারীরা দুই বছর পর্যন্ত তাদের সন্তানকে দুধ পান করানোর নির্দেশ পবিত্র কুরআন থেকে পাওয়া যায়।

পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে স্পষ্ট আদেশ থাকা সত্ত্বেও অনেকে গায়ের জোরে অসুস্থ অবস্থায় এবং সফরে রোজা রাখেন, এটা মোটেও আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির কারণ হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা যা আদেশ দিয়েছেন তা পালন করার মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘তোমাদের মাঝে যে এ মাসকে পাবে সে যেন এতে রোজা রাখে। কিন্তু যে অসুস্থ অথবা সফরে থাকে তাকে অন্যান্য দিনে রোজার এ সংখ্যা পূর্ণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান এবং তোমাদের জন্য কাঠিন্য চান না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৮৫)

এ আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সহজ চান আর তোমাদেরকে কষ্টে ফেলতে চান না।’ কিন্তু আফসোস তাদের জন্য যারা এই রোজাকে কষ্টদায়ক বানিয়ে নেয়।

তারা রোজার বিষয়ে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করে। সমস্ত রোজাকেই তারা ইসলাম মনে করে আর তাই যতই অসুস্থ হোক বা দুর্বল, বৃদ্ধ হোক বা গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী তাদের ক্ষেত্রেও ছাড় দিতে চায় না।

অসুস্থতা যদি বেড়েও যায় অথবা স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে তারপরেও রোজা ছাড়ে না। রোজার ক্ষেত্রে এ ধরনের কঠোরতা কোনোভাবেই ইসলাম সম্মত নয়। আল্লাহপাক মানুষের স্বাচ্ছ্যন্দ চান, মানুষের কষ্ট হোক এটা তিনি চান না।

অপর দিকে কিছু মানুষ এমনও আছে যারা বাহ্যিকতা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, যাদের কাছে রমজানের দিনগুলোর যেন কোনো গুরুত্বই নেই। রমজানুল মোবারক মাস আসে আর তার ফজল ও রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করে চলে যায় কিন্তু তাদের এ দিকে খেয়ালও থাকে না যে, রমজান আসলো এবং চলে গেল।

ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম নিজের কিছু বিধি বিধানের এমন কিছু শর্ত নির্ধারণ করে দিয়েছে যে, যদি এই শর্ত কারো মধ্যে পাওয়া যায় তবে সে যেন এই হুকুমের ওপর আমল করে আর যদি না পাওয়া যায় তবে যেন না করে। যেমন হজ্জ বা জাকাত ইত্যাদির বিধি বিধান। এগুলো সবার জন্য আবশ্যকীয় নয়। তেমনি রমজান মাসে সফর করা অবস্থায় রোজা রাখায় প্রকৃত পক্ষে এতে কোনো কল্যাণ নেই। এমন অবস্থায় রোজা না রাখাটাই কল্যাণ।

আমরা নামাজ, রোজাসহ অন্যান্য আমল শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার নির্দেশেই করে থাকি, তাই রোজা সম্পর্কে আল্লাহর যে আদেশ-নিষেধ রয়েছে তাও মানতে হবে।

অসুস্থদের ক্ষেত্রে রোজা পালনে কঠোর নিষেধ রয়েছে। কোন ব্যক্তি যদি এমন অসুস্থ হোন আর তার পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব হচ্ছে না তাহলে সে ফিদইয়া আদায় করবে আর পরবর্তী রমজানের আগে এ রোজা রাখবে এবং গননা পূর্ণ করবে। যদি সে ফিদইয়াও দেয় আর রোজা রাখে তাহলে তার জন্য অধিক পুণ্য রয়েছে।

যারা চির রোগী, দুর্বল এবং যাদের রমজানের পরেও রোজা রাখার শক্তি নাই, সন্তানদের দুধ দানকারী নারী এবং গর্ভবতী নারী, যাদের পক্ষে রোজা রাখা একেবারেই অসম্ভব ফিদইয়া দেবে।

যদি কোনো মুসলমান বার্ধক্য বা অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে অক্ষম হন এবং পুনরায় সুস্থ হয়ে বা সক্ষমতা ফিরে পেয়ে রোজা আদায় করার কোন সম্ভাবনা না থাকে, সে ক্ষেত্রে তার প্রত্যেকটি রোজার জন্য ফিদিয়া হিসেবে একজন মিসকিনকে খাবার দান করবে। একজনের একদিনের খাবার হিসেব করে কোনো মিসকিনকে সে পরিমাণ অর্থ দিলেও ফিদইয়া আদায় হয়ে যাবে।

আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে রমজানের রোজা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র মাধ্যম। এই রোজা রাখার বিষয়ে আমরা যদি কোনো দুর্বলতা দেখাই তাহলে এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের কারণ হবে।

এছাড়া কোন উপযুক্ত কারণ ব্যতিত সামান্য বিষয়ে অজুহাত দাঁড় করিয়ে রমজানের রোজা ত্যাগ করা মোটেও উচিত নয়।

আমরা অনেককেই দেখতে পাই সামান্য কারণেই রোজা ছেড়ে দেন বা রাখেন না। এছাড়া যারা জেনে বুঝে রোজা ত্যাগ করে তাদের সম্পর্কে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো কারণ ছাড়াই রমজানের একটি রোজাও ত্যাগ করে বা ছেড়ে দেয় সে ব্যক্তি যদি পরবর্তিতে জীবন ভরও ঐ রোজার বদলে রোজা রাখে তবুও সেটা তার পরিপুরক হবে না।’ (মুসনাদ দারমি)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রোজার দিনগুলো সুস্থতার সাথে অতিবাহিত করার সামার্থ্য দান করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com