এমন দুর্যোগেও বাণিজ্য করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও ভর্তি ও সেমিস্টার পরীক্ষা নিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দ্রুত টিউশন ফি পরিশোধ করতে শিক্ষার্থীদের চাপ দিচ্ছে তারা। এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিলেও তা মানা হচ্ছে না।
জানা গেছে, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির প্রস্তুতি শুরু করেছে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে সেমিস্টার পরীক্ষা ও খাতা মূল্যায়ন করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। পরীক্ষায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের দ্রুত সেমিস্টার ফি পরিশোধের জন্য বলা হয়েছে। অর্থ পরিশোধে বিলম্ব করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ তাদের জরিমানা ফি পরিশোধ করতে হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন তারা। এ কারণে ইউজিসিতে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে গত শুক্রবার ইউজিসি থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে করোনা পরিস্থিতির সময়ে অনলাইনে পরীক্ষাগ্রহণ, খাতামূল্যায়ন ও শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষাগ্রহণ ও সামার সেমিস্টারে ভর্তি কার্যক্রম চালু রাখার মতো কোনো অনুকূল পরিবেশ নেই। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যগত বিষয়ে কমিশন ও সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন থাকায় এমন নির্দেশনা দ্বিতীয় দফায় জারি করা হয়।
এর আগে গত ২৩ মার্চ একই নির্দেশনা জারি করে ইউজিসি। এ নির্দেশনা অমান্য করে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করার লক্ষ্যে অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষার নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে।
ইউজিসির সদস্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর রোববার বলেন, বর্তমান জরুরি পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, পরীক্ষা বন্ধ রাখতে দুই দফায় নির্দেশনা দিলেও কেউ কেউ তা অমান্য করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটি মেনে নেয়া হবে না। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, দেশের সকল মানুষ ঘরবন্দি অবস্থা, মানসিক দুশ্চিন্তায় তাদের দিন পার করতে হচ্ছে। এ মুহূর্তে অনেকে দেশের বাড়িতে অবস্থান করছে, সেখানে ইন্টারনেট বা মোবাইলের নেট পর্যন্ত নেই, তাদের ব্যবহারিক পরীক্ষা দেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থী ভর্তি বা পরীক্ষা নেয়ার মতো পরিবেশ নেই। বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। অনলাইনে শুধু পাঠদান কার্যক্রম ছাড়া আর কিছু গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি, পরীক্ষা আয়োজন ও খাতামূল্যায়ন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির লিখিতভাবে ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে প্রস্তাব পাঠান। এ প্রস্তাব নাকজ করে দেয়ার পরও তোয়াক্কা করছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
জানতে চাইলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির রোববার বলেন, গত ২৩ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলা হয়। শিক্ষার্থী ভর্তি, পরীক্ষা ও খাতামূল্যায়ন শিক্ষাকার্যক্রমের আওতাভুক্ত হওয়ায় আমরা এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।
তিনি বলেন, এ-সংক্রান্ত অনুমোদনের জন্য ইউজিসিতে আবেদন করা হয়। যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি ও টিউশন ফি দিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়ে থাকে। অর্থ আদায় বন্ধ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে অনলাইনে ভর্তি-পরীক্ষা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমি শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব ও ইউজিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। আমাদের সমস্যাগুলো তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। দ্রুত এ বিষয়ে অনুমোদন দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের শীর্ষমানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইউজিসির আইন অমান্য করে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে ও সেমিস্টার পরীক্ষা নিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তার মধ্যে রয়েছে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনির্ভাসিটি, ইউল্যাব, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক তিন সেমিস্টার পরিচালনা হওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে তারা বিপাকে পড়েছেন।
তাই সারাদেশ অচল অবস্থার মধ্যেও কোনোমতে সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ করে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে চায় তারা। তবে সেসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সেমিস্টার রয়েছে তারা নির্দেশনা মান্য করছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি পরিশোধ ও পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ কারণে তারা নিজেদের সমস্যা তুলে ধরে ইউজিসিতে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহিদুল্লাহ রোববার বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ভর্তি ও পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হলে আমরা তা নাকচ করে দিয়েছি। এপ্রিল মাস পর্যন্ত তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। মে মাসে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
চেয়ারম্যান বলেন, কেউ কেউ এ নির্দেশনা অমান্য করছে, এটি দুঃখজনক। সেখানে সারাদেশের মানুষ দায়িত্বশীল হলে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে, অথচ শিক্ষার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বেশি দায়িত্ব থাকলেও তারা বাণিজ্যিক চিন্তা করছে, তাদের দায়িত্বশীল হতে মানবিক আচরণ করার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে অনলাইনে পরীক্ষা দেয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি, সেই পরিবেশও এখন নেই। কেউ তা করলে সেসব সনদ গ্রহণযোগ হবে না।