ত্রাণ নেয়ার সময় ছবি না তোলায় দুস্থদের মারধর করলেন চেয়ারম্যান
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি ত্রাণ বিতরণের সময় ছবি তুলতে না চাওয়ায় অসহায় নারী-পুরুষের সঙ্গে চরম অসদাচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই চেয়ারম্যান ত্রাণ নিতে আসা অসহায় নারী-পুরুষকে মারধর করে ভিডিও ধারণ করতে বাধ্য করেছেন।
এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বিশ্বাস। ত্রাণ নিতে আসা অসহায় মানুষকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের জন্য সরকার কর্তৃক দেশব্যাপী প্রতিটি ইউনিয়নে দুস্থদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের জন্য সরকারিভাবে ৪৫০ জন দুস্থ নারী-পুরুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের বরাদ্দ দেয়া হয়।
শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সকালে বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে দুস্থ নারী-পুরুষের মাঝে নিজ হাতে সরকারি বরাদ্দের ত্রাণ বিতরণ করেন বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বিশ্বাস। সরকারি ত্রাণ বিতরণের সংবাদ প্রচারের জন্য তিনি স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীকে আমন্ত্রণ জানান। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে দু’একজন ত্রাণ বিতরণের ভিডিও ধারণ করেন। অনেক দুস্থ ছবি তুলতে না চাওয়ায় তাদের মারধর করেন চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে দুস্থ নারী-পুরুষকে মারধর করে জোরপূর্বক ছবি তুলতে বাধ্য করেছেন তিনি। এ সময় একজন বৃদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন চেয়ারম্যান।
ত্রাণ বিতরণে চেয়ারম্যানের এমন আচরণের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। দরিদ্রদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের এমন আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন সবাই।
এলাকাবাসী জানায়, চেয়ারম্যান বিশ্বাস খুবই বদমেজাজি। কথায় কথায় তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ নিয়ে দুবার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কিন্তু ত্রাণ বিতরণের সময় ছবি তুলতে মারধর করা ঠিক হয়নি তার। এ ঘটনায় তার শাস্তি হওয়া উচিত।
শুধু সাধারণ মানুষ নয়; খোদ দলীয় নেতাকর্মীরা ত্রাণ নিতে আসা সহজ-সরল অসহায় দুস্থ নারী-পুরুষের সঙ্গে চেয়ারম্যানের এমন আচরণের তীব্র সমালোচনা করে শাস্তি দাবি করেছেন।
ত্রাণ নিতে আসা অসহায় মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণ কি জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এমন আচরণ করেছি আমি।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, সরকারি ত্রাণ বিতরণকালে দুস্থদের সঙ্গে একজন জনপ্রতিনিধির অসদাচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক মৃনাল কান্তি দে বলেন, ইউএনও আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তদন্তপূর্বক এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।