স্কুলছাত্রীকে হত্যা করে প্রকাশ্যে আ.লীগ নেতা বাবুল
নরসিংদীতে অতিসম্প্রতি কারাবন্দি থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে দুর্গম চরের গ্রামে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রায়পুরা উপজেলা চাঁনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ বাবুল মিয়া।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ বাধে এতে স্কুুলছাত্রী সোনিয়া আক্তার (১৩) কে নিজ হাতে টেটাবিদ্ধ করেন আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল মিয়া। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোনিয়ার মৃত্যু হয়। নিহত সোনিয়া চাঁনপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের জালাল মিয়ার মেয়ে ও সদাকরকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী।
এ ঘটনায় বাবুল মিয়া ও তার সাঙ্গু পাঙ্গুদের বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন সোনিয়ার বাবা জালাল মিয়া। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা বলে কথা বাবুল মিয়াকে গ্রেফতার না করে তার দুই সমর্থক সাত্তার ও এরশাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বাবুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার আটদিন অতিবাহিত হলেও প্রধান আসামি বাবুল মিয়াসহ অন্য আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারছে না থানা পুলিশ।
উল্টো বাদিপক্ষকে মামলা দিয়ে হয়রানিসহ হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে বাবুল গ্রুপ। এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতা আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছে বলে জানান নিহত সোনিয়া পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, প্রবাসী ও কৃষি নির্ভর ওই চরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন চাঁনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল মিয়া ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। দাঙ্গা ফ্যাসাদ, জমি দখল, সেতু নির্মাণ ও বিদ্যুৎ সংযোগের নামে কোটি টাকা চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, মাদক ব্যবসা, নারী নির্যাতন, অস্ত্রের মহড়াসহ তার বহুমুখী অপকর্মে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন চরা লবাসী। এসব অপরাধের জেরে বাবুল মিয়া কয়েক মাস আগে পল্লী বিদ্যুতের দায়ের করা এক মামলায় কারাবন্দি ছিলেন। এতে এলাকায় শান্তি ফিরে আসে। পল্লী বিদ্যুতের মামলার তদন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্ত গড়ায়।
এই সুযোগে বাবুল মিয়া জামিনে বের হয়ে গ্রামের চরে চলে আসেন। এর মাঝে পুরনো শত্রুতার কারণে একই ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির মিয়ার সাথে বাবুল গ্রুপের পুনরায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
এরই জেড়ধরে গত ২৭ মার্চ শুক্রবার রাতে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরদিন ২৮ মার্চ শনিবার সকালে নাসির পক্ষের লোকজন পালিয়ে গেলে বাবুল মিয়া তার দলবল নিয়ে নাসির গ্রুপের লোকজনের বাড়িঘর ভাংচুর করে।
এসময় বাবুল মিয়া প্রতিবেশী জালাল মিয়াকে মারধর করতে থাকলে তার মেয়ে স্কুলছাত্রী সোনিয়া আক্তার এগিয়ে আসে। সোনিয়াকে সামনে পেয়ে বাবুল মিয়া নিজ হাতে তাকে টেটাবিদ্ধ করে চলে যায়। আহত বাবা মেয়ের অবস্থা বেগতিক দেখে আশপাশের লোকজন তাদের প্রথমে রায়পুরা হাসপাতালে ভর্তি পরে। পরে সোনিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি অবস্থায় ওইদিনই বিকেল ৫ টায় সোনিয়া মারা যায়।