করোনা নিয়ে ‘গুজব’: গ্রেপ্তার বন্ধের আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছে, করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যক্রমের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ বাক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছে।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ে যারা কথা বলছে, তাদের ও একাডেমিকদের টার্গেট করা বন্ধ করা উচিত বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের। ভাইরাসটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ও সঠিক তথ্য যেন সবার জন্য উন্মুক্ত হয় সেই আহ্বানও জানানো হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন সময় নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি বিবৃতি দিল যখন সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ার একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বাংলাদেশের পুলিশ বলছে, গুজব ছড়ানোর অভিযোগে চাঁদপুর, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং কিশোরগঞ্জ থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ছাড়া আরও ৫০টি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিটিআরসিকে অবহিত করেছে পুলিশ।
পুলিশের মুখপাত্র সোহেল রানা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটিতে আরও লেখেন, ফেসবুকের ৮২টি অ্যাকাউন্ট, পেইজ এবং ওয়েবসাইট সম্পর্কে পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে বলা হয়, মার্চের মাঝামাঝি থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে করোনাভাইরাস সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক, বিরোধীদলীয় অ্যাক্টিভিস্ট ও ছাত্রসহ অন্তত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, “কভিড-১৯ সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধ করা সরকারের দায়িত্ব হলেও যারা দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করছে, তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়।”
“সরকারের উচিত মানুষের বাক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ না করা এবং ভাইরাস সংক্রমণ রোধ, সুরক্ষা ও প্রতিকারে কর্তপক্ষের পরিকল্পনা সম্পর্কে যথাযথ তথ্য দিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করা।”
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের সুরক্ষা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকার। পাশাপাশি সব ধরনের তথ্য দাবি করা, তথ্য পাওয়া এবং যে কোনো বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্যলাভের অধিকারও নাগরিকদের রয়েছে। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি মাথায় রেখে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তথ্যের অধিকার ক্ষুন্ন হয় বলে মন্তব্য করা হয় বিবৃতিতে।
এ দিকে ২৫ মার্চ বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যেখানে টেলিভিশন চ্যানেলে কভিড-১৯ সংক্রান্ত ‘গুজব’ ও ‘উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার’ পর্যবেক্ষণ করতে ১৫ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে নির্দেশটি পরদিনই বাতিল করে দেয়া হয়।
কাছাকাছি সময়ে ভাইরাস নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করায় দুইজন কলেজ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এপিডেমোলজিকাল মডেলিং-এর ওপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করায় এক গবেষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, “ফেসবুক ও টেলিভিশনের ওপর নজরদারি করে মানুষকে গ্রেপ্তার না করে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের উচিত এই শক্তিটা ভাইরাস দমনে কাজে লাগানো।”
আরও বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাজে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং ভাইরাসের বিস্তার ও প্রভাব সম্পর্কে প্রত্যেকে যেন সঠিক তথ্য পায়, তা নিশ্চিত করা উচিত সরকারের।”