‘আসামি’ ধরতে গিয়ে বাড়িওয়ালাকে পিটিয়ে মারল পুলিশ!
রাজধানীর উত্তরখানে মনিরুজ্জামান হাওলাদার মনির (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার ভোরে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণ করে আটকে রাখার কথিত অভিযোগে চামুরখান এলাকার একটি বাড়িতে অভিযানে যায় উত্তরখান থানা পুলিশের একটি দল। এ সময় বাড়ির মালিক মনিরুজ্জামানকে ছাদে নিয়ে গিয়ে পুলিশ বেধড়ক মারধর করে বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যু হয়। তবে উত্তরখান থানা পুলিশের ভাষ্য, মনিরুজ্জামানকে মারধর করা হয়নি, অভিযানের সময় ভয়ে স্ট্রোক করে মারা গেছেন তিনি।
মনিরুজ্জামান হাওলাদারের ছোট ভাই মিলন হাওলাদার বলেন, তার বড় ভাই মনিরুজ্জামান চামুরখানে নিজের চারতলা বাড়িতে থাকতেন। ওই বাড়িতে ভাড়া থাকেন জয়নাল আবেদীন ও তার পরিবার। মনিরুজ্জামানের বাড়ির পাশের বাসার ঊর্মী নামে এক তরুণীর সঙ্গে জয়নাল আবেদীনের ছেলে জহুরুলের বিয়ের আয়োজন চলছিল শুক্রবার। বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছিল মনিরুজ্জামানের বাসায়। এ জন্য রান্নাবান্নাও হয়। অতিথিদের খাওয়া-দাওয়া যখন প্রায় শেষ, ঠিক সেই মুহূর্তে সোহেল নামে এক যুবক বিয়েবাড়িতে আসে। ঊর্মীর সঙ্গে তার পাঁচ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছে বলে দাবি করেন সোহেল। এ নিয়ে বিয়েবাড়িতে শুরু হয় হট্টগোল। পরে মনিরুজ্জামানের মধ্যস্থতায় কনেপক্ষ সোহেলের সঙ্গে ঊর্মীর বিয়ে দিতে রাজি হয়। তবে বিয়েতে যেহেতু জহুরুলের পরিবারের অনেক টাকা খরচ হয়েছে তাই ক্ষতিপূরণ হিসেবে
সই টাকা সোহেলের পরিবার দেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী টাকা নিয়ে সোহেলের পরিবারের সদস্যদের মনিরুজ্জামানের বাসায় আসতে বলা হয়। খবর পেয়ে ওই বাসায় আসেন সোহেলের বোন ও ভগ্নিপতি। সেখানে সোহেলের বোন ও ভগ্নিপতির সঙ্গে ঊর্মীর পরিবারের সদস্যদের কথা হয় এবং তারা দুই পরিবারই সোহেল-ঊর্মীর বিয়েতে রাজি হয়। কিন্তু ক্ষতিপূরণের এক লাখ টাকা পরদিন দেবে বলে জানান সোহেলের বোন-ভগ্নিপতি। সে অনুযায়ী রাতে সোহেল ও তার বোন চামুরখানের ওই বাসায় থাকেন।
কিন্তু শনিবার ভোরে হঠাৎই উত্তরখান থানা থেকে প্রায় ২৫-২৬ জন পুলিশ সদস্য মনিরুজ্জামানের বাসায় আসেন উল্লেখ করে মিলন হাওলাদার বলেন, ‘পুলিশের কাছে অভিযোগ আসে বাসায় পাঁচজনকে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি ও মারধর করেছে। পুলিশ তিনজনকে ধরে এবং মনিরুজ্জামানকে মারতে মারতে চারতলার ছাদে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ নিচে নেমে এসে জানায়, আমার ভাই স্ট্রোক করেছে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান। পুলিশ ছাদে নিয়ে পিটিয়ে ওনাকে হত্যা করেছে।’