রাস্তায় প্রকাশ্যে কলেজ শিক্ষিকার শ্লীলতাহানি ছাত্রলীগ নেতার
টাঙ্গাইলে রাস্তার ওপর প্রকাশ্যে এক শিক্ষিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা ও আওয়ামী লীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলায় হওয়ায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টাঙ্গাইলের নাগরপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাদিকুর রহমান বিপ্লব ও মাইক্রোবাসচালক বাবুর বিরুদ্ধে নাগরপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক। শুক্রবার (২০ মার্চ) সকালে বাবুকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ওই শিক্ষিকা তার অভিযোগে বলেছে, নাগরপুর সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক শামীমা ইয়াসমিন বৃহস্পতিবার রাতে চশমা মেরামত করতে গেলে দোকানে কাউকে না পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় আলমামুন দোকানে এসে বসলে শিক্ষিকা তাকে দোকানদারের কথা জিজ্ঞেস করেন। এ সময় শিক্ষিকার সঙ্গে মামুন খারাপ ব্যবহার করেন। শিক্ষিকা এর প্রতিবাদ করলে বাবু ও বিপ্লব এগিয়ে এসে মামুনের সাথে যুক্ত হয়ে শিক্ষিকাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও মারতে উদ্যত হন। এক পর্যায়ে টান দিয়ে শিক্ষিকার মুখের হিজাব খুলে ফেলেন তারা।
এ ব্যাপারে সাবেক ভিপি আল-মামুন ঘটনা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক এ মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নাগরপুর থানার (ওসি) আলম চাঁদ বলেন, নাগরপুর সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক শামীমা ইয়াসমিন শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে সাবেক ভিপি মামুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
Shamima Eaysmine
“আমরা কি ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি। নিজে আজ শত শত মানুষের সামনে নাগরপুরের বাজারে মাত্র ৩-৪জন ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের কাছে চরমভাবে নিগৃহীত ও শ্লীলতাহানীর শিকার হলাম, তখন একটি মানুষও আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলো না। নাগরপুর সরকারি কলেজ, টাঙ্গাইল এর একজন শিক্ষক হিসেবে নিজের কলেজের সাবেক ভিপি ও ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসী মামুন ও তার সহযোগী ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসী বিপ্লব ও বাবু কর্তৃক শারীরিকভাবে হেনস্তার শিকার হলাম তা কতটা অভাবনীয় তা বলে বুঝাতে পারব না।
তারা শত শত মানুষের মাঝখানে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং কাপড় ধরে টানাটানি করে, একপর্যায়ে টান দিয়ে আমার মাথার কাপড় খুলে ফেলে।
ঘটনার প্রেক্ষিতে আমি প্রশাসনের কাছে থানায় অভিযোগ দেব এই কথা বলে আমার নিজের পরিচয় দেওয়ার পর তার আরও আস্ফালন করে বলে যে ডিসি এসপি ইউএনও ওসি তাদের পকেটে থাকে। তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। আমি সরকারি কলেজে প্রভাষক এটা শুনে যেন তাদের উৎসাহ আরো বেড়ে যায়।
একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমার যদি এমন অবস্থা হয় তাহলে নাগরপুরের অন্যান্য মেয়েদের কি অবস্থা আমি চিন্তা করতে পারছি না।
ঘটনার প্রেক্ষিতে আমি নাগরপুরের ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে থানায় প্রাথমিকভাবে অভিযোগ দিয়েছি আজ মামলা করব বলে স্থির করেছি। আমি নাগরপুর টাংগাইল এর এই ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের বিচার চাই। এবং আমি তাদের বিচার নিশ্চিত করা না পর্যন্ত শান্ত হবো না বলে প্রতিজ্ঞা করেছি।
এছাড়া নাগরপুরের রাস্তাঘাটে তারা যেন নারীদের আর কোনভাবে হেনস্তা করতে না পারে তার জন্য যা যা করা দরকার আমি করব।
ঘটনার পূর্ণ বিবরণী মানসিক অবস্থায় দেয়া সম্ভব নয়। একটু সুস্থির হলে আমি ঘটনার বিবরণ সবার সামনে তুলে ধরবো। ঘটনাটি রাত্রিবেলায় হওয়ায় উপযুক্ত সকল কর্তৃপক্ষকে জানানো সম্ভব হয়নি।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয় কে জানানো হয়েছে।
আমি যেন মানসিকভাবে শক্ত থাকতে পারি তার দোয়া সকলের কাছে চাচ্ছি এবং সবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করছি।
ঘটনার আপডেটঃ (রাত ১০টা, ২০/০৩/২০২০)
দুপুরের আশা রাত্রে হতাশায় পরিণত হয়ে গেছে। আটককৃত আসামি জামিনে মুক্ত। নাগরপুর থানার এসআই এসে আমাকে আসামির জামিনের কথা বলে গেল। সে এখন ঘটনাস্থলে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে আর সাগরেদদের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠেছে। আর আমি এখন নিজের উপজেলা হোস্টেলের রুমে বন্দি। কালকে সকালে মানববন্ধন আছে, আর আসামিরা সবাই বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে আমি কোন সাহসে বাইরে বের হব। এই কুলাঙ্গার সন্ত্রাসীদের ভয়ে কতদিন বাসায় বন্দী থাকতে হবে বা ছুটি নিয়ে অন্য কোথাও যে থাকতে হবে আল্লাহ ভালো জানে।
******
আরও হতাশ লাগে যখন কোন দায়ীত্বশীল ক্যাডার অফিসার বলে আমি নাকি ঘটনার প্রতিবাদ না করে মান-সন্মান নিয়ে বের হয়ে আসলে আজ এই ঘটনা ঘটতোনা। আমার প্রতিবাদ করাটা এখন তাদের বিব্রত হওয়ার কারন। তার বোনের সাথে এমন ঘটনা ঘটলে কি সে একথা বলতো কিনা এই প্রশ্ন করার খুব ইচ্ছে। পরিস্থিতির কারনে আর জিজ্ঞেশ করতে পারিনি।
******
আপডেটঃ (দুপুর ১টা, ২০/০৩/২০২০)
দণ্ডবিধির ৩৫৪ ও ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের। নাগরপুর থানার তৎপরতায় একজন আসামী গ্রেপ্তার।
স্থানীয় এমপি মহোদয়, জেলা প্রশাসক টাঙ্গাইল মহোদয়, পুলিশ সুপার টাঙ্গাইল মহোদয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাগরপুর মহোদয়, শ্রদ্ধেয় এসি ল্যান্ড নাগরপুর ভূমি অফিস ও শ্রদ্ধেয় ওসি, নাগরপুর থানা প্রশাসনিক ভাবে সকল ধরনের সহযোগিতা করেছেন। আমাকে অভয় দিয়েছে নিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হবে। সকলেই আমাকে অভয় দিয়েছে।
বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা হয়েছে তারা সাংগঠনিকভাবে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে যাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। এক ঘটনা শেষ পর্যন্ত তারা আমার সাথে থাকবে বলে জানিয়েছেন।
দুপুরের আশা রাত্রে হতাশায় পরিণত হয়ে গেছে। দুপুরে আটককৃত আসামি সন্ধ্যায় জামিনে মুক্ত। নাগরপুর থানার এসআই এসে আমাকে আসামির জামিনের কথা জানিয়ে গেল। এখন ঘটনাস্থলে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে আর সাগরেদদের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠেছে। আর আমি এখন নিজের উপজেলা হোস্টেলের রুমে বন্দি। কালকে সকালে মানববন্ধন আছে, আর আসামিরা সবাই বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে আমি কোন সাহসে বাইরে বের হব। এই কুলাঙ্গার সন্ত্রাসীদের ভয়ে কতদিন বাসায় বন্দী থাকতে হবে বা ছুটি নিয়ে অন্য কোথাও যে কতদিন থাকতে হবে আল্লাহ ভালো জানে।
আচ্ছা আমার প্রশ্নঃ
রাষ্ট্র কি এখন আমাকে নিরাপত্তা দিতে পারবে?
আমরা মেয়েরা কি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারবোনা?
আমার এই আতঙ্কের সময় শেষ হবে কবে?”