বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে হস্তান্তর করা হবে জুলাই সনদ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তুতকৃত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর চূড়ান্ত অনুলিপি আজ মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে এই সনদে সংস্কার বাস্তবায়নের পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কমিশন পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট দলগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবে।
আগামী ১৭ অক্টোবর, শুক্রবার, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোট এই ঐতিহাসিক সনদে স্বাক্ষর করবে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রতিটি দলের মনোনীত প্রতিনিধি সনদে স্বাক্ষর করবেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার জানিয়েছেন, সব দল ইতোমধ্যে তাদের স্বাক্ষরকারী প্রতিনিধিদের নাম চূড়ান্ত করেছে।
জুলাই সনদের গঠনকাঠামো অনুযায়ী, এটি তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত-
ভূমিকা ও প্রেক্ষাপট: এ অংশে সংস্কার উদ্যোগের ইতিহাস ও প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ থাকবে।
সংস্কার প্রস্তাবের তালিকা: মোট ৮৪টি প্রস্তাব এতে স্থান পেয়েছে, যেগুলোতে সব দল একমত হয়েছে।
অঙ্গীকারনামা: দলগুলোর স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত এই অংশে ৩০টি পৃথক কপি রাখা হবে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে ঐকমত্য কমিশন। ইতোমধ্যে দক্ষিণ প্লাজায় মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় তিন হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানটি দুই পর্বে সম্পন্ন হবে। প্রথম পর্বে মাগরিবের নামাজের আগেই স্বাক্ষর পর্ব শেষ করা হবে। দ্বিতীয় পর্বে থাকবে একটি ভিডিওচিত্র, যেখানে প্রজেকশন ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে সনদ প্রণয়নের পটভূমি তুলে ধরা হবে। এছাড়া একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর দলগুলোর কাছে একটি খসড়া ভাষ্য পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে সেটিকেই চূড়ান্ত হিসেবে ধরা হলেও পরবর্তীতে কিছু ভাষাগত ও বাক্য গঠনগত সংশোধন করা হয়েছে। তবে এখন আর কোনো দলের কাছ থেকে অতিরিক্ত মতামত নেওয়া হবে না।
একটি বিতর্কিত বিষয় ছিল সংবিধানের ৪(ক) অনুচ্ছেদ-যেখানে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বেশিরভাগ দল এই বিধান বিলুপ্তির পক্ষে মত দিলেও সনদে সেটি রাখা হয়নি। কমিশনের যুক্তি হলো, এটি একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক ইস্যু এবং ভবিষ্যৎ সংসদ চাইলে এই বিধান সংশোধন করতে পারবে। তাই এটিকে সনদে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন মনে করেনি কমিশন।
ঐকমত্য কমিশন দুই দফায় দেশব্যাপী সংলাপ আয়োজনের পর ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করে। এগুলো নিয়েই ‘জুলাই সনদ’ গঠিত হয়। মূলত জুলাই মাসেই সনদে স্বাক্ষর করার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবায়নের রূপরেখা নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে তা পিছিয়ে যায়। পরে কমিশন দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে।
এ সময় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে দলগুলোর মধ্যে সম্মতি তৈরি হলেও, ভোটের পদ্ধতি, সময় ও কাঠামো নিয়ে এখনও ভিন্নমত রয়ে গেছে। তাই কমিশন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে একটি সমন্বিত সুপারিশমালা প্রস্তুত করে সরকারের কাছে জমা দেবে।