আসন্ন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে কঠোর নির্দেশনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা প্রদানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রবিবার (১২ অক্টোবর) আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা জানান, সভায় মূলত নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইনবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থাকার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়ার আলোচনা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হবে।
নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণের অগ্রগতির বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, নির্বাচনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ২৮টি ব্যাচে তিন দিন মেয়াদি এই প্রশিক্ষণ গত ৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে শুরু হয়েছে এবং ১৫ জানুয়ারি ২০২৬ তারিখে সম্পন্ন হবে।
এছাড়া, আনসার ভিডিপি সদস্যদের জন্য ‘প্রাক নির্বাচনী প্রশিক্ষণ’ শিরোনামে আনুমানিক ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্রের জন্য মোট ৫ লাখ ৮৫ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যার মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজার জন অস্ত্রসহ প্রশিক্ষণ পাবেন। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে তাদের প্রশিক্ষণ শেষ হবে। আনসার ব্যাটালিয়নের ৩১৫৭ জন সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে বিজিবির ১১০০ প্লাটুনে ৩৩ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবে, যাদের ৬০ শতাংশের প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং ৩১ ডিসেম্বর প্রশিক্ষণ শেষ হবে। এবারের নির্বাচনে প্রায় ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, গত ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিদের আসন্ন নির্বাচনে যথাসম্ভব দায়িত্ব প্রদান করা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হবে।
তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমানা পুনর্নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না ঘটে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি এখন শান্ত ও ভালো রয়েছে। তিনি আরও বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যদিও ফ্যাসিস্টের লোকজন ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করেছিল। মাদকের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং শুধু বাহকদের নয়, মাদকের গডফাদারদের আটক করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।