ডায়াবেটিস চেনার ১০ লক্ষণ

0

ডায়াবেটিস রোগী এখন ঘরে ঘরে। কেবল আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। কিন্তু কেন এমন অবস্থা?
অনেক কারণের কথা বলা হয়। আবার সুনির্দিষ্ট কারণ কিন্তু জানা যায় না। তবে সাধারণ অর্থে ধরে নেয়া যায় আমাদের নিজেদের অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্যেই ডায়াবেটিসের উদ্ভব। তাই চিকিৎসকেরা একে ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’ হিসেবেও বিবেচনা করে থাকেন।

ডায়াবেটিস কী তাই আগে জানা যাক। প্রাচীনকাল থেকে আমরা শুনে আসছি ‘মধুমেহ’ নামে শরীরের উপসর্গটিই হচ্ছে বর্তমান দিনের ‘ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ’। ডাক্তারি ভাষায় বিবেচনা করে বলা হয় মেলিটাস, ইনসিপিডাস, এডিএইচ, অ্যান্টিভাই ইউরেটিক হরমোনের ক্রিয়াকলাপের ফল। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন হরমোনের সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে শর্করা বা গ্লুকোজ শোষণ করে। যার ফলে শরীরে শক্তি উৎপাদন হয় এবং সঠিকভাবে দেহ চলাচলে উপযোগী হয়। যখন অগ্ন্যাশয় পরিমাণ মতো এই ইনসুলিন হরমোন উৎপাদন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে তখন রক্তে সুনির্দিষ্ট মাত্রার অধিক শর্করা বা চিনির আধিক্য দেখা দেয়। ফলে তখনই মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ এই রোগের সাধারণ কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেগুলো ভালো করে খেয়াল করলে সহজেই চিহ্নিত করা যায় ডায়াবেটিস রোগটি।

ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো হলো :
১) ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া এবং শরীর থেকে অত্যধিক পরিমাণে গ্লুকোজ নির্গত হওয়া।
২) ঘন ঘন পানির পিপাসা পাওয়া।
৩) শারীরিক দুর্বলতা অনুভূত হওয়া।
৪) ঘন ঘন খিদে পাওয়া।
৫) দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পাওয়া।
৬) ধীরে ধীরে ওজন কমে যাওয়া।
৭) হাতে-পায়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া বা মাঝে মাঝে অবশ হয়ে যাওয়া।
৮) শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে তা সহজে না সারা।
৯) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।
১০) চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়।

রোগ নির্ণয় উপরিউক্ত লক্ষণের উপর নির্ভর করে নিজেরা রোগ নির্ণয় করলেও রোগটি কতটা দীর্ঘায়িত হয়েছে তা জানতে ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজন।
১) ডাক্তারের তৈরি করা প্রেসক্রিপশন-এর ভিত্তিতে শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা করা আবশ্যক।
২) সারারাত অথবা অন্তত আট ঘণ্টা উপবাস থেকে ফাস্টিং প্লাজমা গ্লুকোজ টেস্ট করান। রক্তে স্বাভাবিক প্লাজমা গ্লুকোজের মাত্রা ১১০ মিগ্রা / ডিএল-এর কম থাকে তা স্বাভাবিক এবং ১২৬ মিলিগ্রাম / ডিএল এর বেশি থাকলে ডায়াবেটিস হয়েছে বলে নির্ধারণ করা হয়।
৩) খাওয়ার দু’ঘণ্টা পর পোস্ট প্রান্ডিয়াল (পিপি) প্লাজমা গ্লুকোজ টেস্ট করান। পিপির স্তর ১৪০ মিগ্রা / ডিএল-এর বেশি থাকলে তাকে স্বাভাবিক বলে বিবেচনা করা হয়। আর ২০০ মিলিগ্রাম / ডিএল-এর বেশি থাকলে ডায়াবেটিস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার ফলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ নির্গত হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে রোগী শারীরিকভাবে দুর্বলতা অনুভব করে। এই অবস্থায় যদি রোগ নিয়ন্ত্রণে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তবে শরীরের রক্তনালি, স্নায়ু, কিডনি থেকে চোখ ও হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। এই সমস্যা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। প্রসঙ্গত, জীবনযাত্রার সঙ্গে এই রোগের যেহেতু সরাসরি যোগ রয়েছে, তাই যেকোনো নিয়ম মানার আগে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি।

১) ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। সঠিক সময়ে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
২) নিয়মমাফিক ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে।
৩) শরীরে ভিটামিন ডি- এর ঘাটতি দেখা দিলে ইনসুলিন রেজিসটেন্সের আশঙ্কা থাকে। তাই আজ থেকেই ভিটামিন- ডি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- মাছ, দুধ, কমলা লেবুর রস, সোয়া দুধ ও ডিম খাওয়া শুরু করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৪) প্রতিদিন বার্লি খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায়, যা দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে। সেই সঙ্গে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে।
৫) কখনোই খালি পেটে থাকবেন না। তিন থেকে চার ঘণ্টা অন্তর খাবার গ্রহণ করবেন। ৬) রোজ সকালে এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে ১ চামচ মেথি পাউডার মিশিয়ে খান। মেথিতে উপস্থিত উপাদানগুলো দ্রুত শর্করার মাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে অল্প দিনেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে।
৭) রোজ খাবার সবুজ শাকসবজি খান। এগুলো রক্তে সুগারের মাত্রা কমতে সাহায্য করে। যেমন – পালং শাক, কর্নফ্লাওয়ার, লেটুস জাতীয় শাকসবজি।

৮) রোজ নিয়মমাফিক ফল খান। ফলে ফাইবার থাকায় তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। সেই সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রাও কমতে থাকে।
৯) রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া প্রয়োজন। ডায়াবেটিক রোগীদের মাথায় রাখতে হবে শরীরে পানির পরিমাণ যত কমবে, তত কিন্তু পরিস্থিত হাতের বাইরে চলে যাবে। তাই সময়মতো পানি পান করতে হবে।

১০) কাঁচা হলুদ বেটে বা হলুদ গুঁড়োর সঙ্গে অ্যালোভেরা ও পানি মিশিয়ে জুস তৈরি করুন। রোজ রাতে খাওয়ার আগে অল্প করে পান করুন। এতে ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসবে।
১১) প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় নিয়ম করে ১৫ থেকে ৩৯ মিনিট হাঁটতে হবে এবং শরীর চর্চা করতে হবে। এতে সুগারের মাত্রা অনেকটাই কমতে থাকে। ১২) সর্বোপরি ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের রাতজাগা চলবে না। রাত জাগলে অসুখের মাত্রা আরো বাড়বে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com