ভাবা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিবাদী প্রতিষ্ঠান আজ ‘তোষামোদির ভাগাড়ে’
কামরুল হাসান মামুন মাত্র কয়েকদিন আগেই পাকিস্তানের সেরা পদার্থবিদ পারভেজ হুডভয়ের পাকিস্তানের বিখ্যাত ‘উধহি’ পত্রিকায় Why Pakistan loses its best শিরোনামে লেখা আর্টিকেল নিয়ে বাংলাদেশের পার্সপেক্টিভ তুলে ধরেছিলাম। পাকিস্তানের এই পদার্থবিদ এই ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে করাচিতে অনুষ্ঠিত লেখক ও শিক্ষাবিদদের এক আর্টস কাউন্সিলে সাংঘাতিক কিছু কড়া এবং পাকিস্তানিদের কাছে তেতো কিন্তু দুর্দান্ত কিছু কথা বলেছেন। মানুষটার সাহস আছে। ওই ভাষণে তিনি বলেছেন ‘আমরা বাঙালিদের mistreat: করেছি।
আমরা তাদের নিম্নশ্রেণির হিসেবে ভেবেছি এবং treat করেছি। আমরা তাদের শোষণ করেছি এবং শেষমেশ আমরা তাদের সমূলে উৎপাটনের উদ্দেশে massacre করেছি’। তিনি বলেন ‘পাকিস্তানের জন্মের বেসিসই ঠিক নেই। জিন্নাহ যেইভাবে পাকিস্তানের জন্মের বেসিস বাতলেছেন যে, উপমহাদেশে কেবল দুটো জাতি একসঙ্গে থেকেছে। এই দুই জাতি একে অপরকে শত্রু জ্ঞান করেছে এবং তারা একসঙ্গে শান্তিতে একই ভূমিতে বসত করতে পারে না’। তিনি বলেন, ‘যদি মুসলমানরা মিলে একটি দেশ বানালে শান্তিতে বসবাস করতে পারতো, তাহলে বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না। আমি বাংলাদেশ ইস্যুটাকে নিয়ে আলোচনা করতে চাই, কারণ এটা নিয়ে পাকিস্তানে অফিসিয়ালি কোনো আলোচনা পাওয়া যায় না। আমরা কেবল ষড়যন্ত্রের কথা শুনি। তার চেয়েও বড় ননসেন্স হয়তো আছে যা কখনো আলোচনায় আসেনি’। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বা জাতি তৈরিই যদি উন্নত জাতির সোপান হতো তাহলে আরবরা এতো বর্বর হতো না। ভারত যে এখন ধর্মের দিকে ঝুঁকে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছে তাতে কি কল্যাণ আছে? আমি ভবিষ্যৎ বাণী করলাম যদি এই পথে আরও কিছুদূর হাঁটে তাদের পতন অনিবার্য। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের জন্মের পেছনে সত্যিকারের কোনো দর্শন ছিলো না। তাই পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিলো state of confusion–এর মধ্যে’। যেইগুলো কোর ফান্ডামেন্টাল সেগুলোকে ঠিক না করে কীভাবে জাতি গঠন সম্ভব? কিন্তু বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের ফান্ডামেন্টাল কোর ঠিক ছিলো। যদিও আমরা সেই কোর ফান্ডামেন্টাল থেকে সরে গিয়ে ফান্ডামেন্টালিস্ট কোরের দিকে ঝুঁকেছি।
পারভেজ বলেন, ‘পাকিস্তান নিয়ে তার কোনো ভিশন ছিলো না। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো তখন তিনি বলেছিলেন পাকিস্তান কেমন হবে সেটা নিয়ে ভাবার অনেক সময় পাবো। আমরা যখন পাকিস্তান সৃষ্টি করবো আমরা দেখবো কী করা যায়’। তিনি এরপর বলেন এ সব কথা বলার জন্য আমাকে অ্যারেস্ট করবে? এই নেন করেন। কী সাহসী একজন মানুষ। ঊীধপঃষু তাই। সত্যিকারের শিক্ষাবিদ হলে একজন মানুষকে দেশ ও জাতির কল্যাণে এ রকম সাহসীই হতে হয়। বাংলাদেশের এখন মূল সমস্যা এ রকম সাহসী মানুষের অভাব। ভাবা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিবাদী প্রতিষ্ঠান আজ ‘তোষামোদির ভাগাড়ে’ পরিণত হয়েছে। সরকারি দল শিক্ষকরা কেন করে আমরা জানি না? কেবল নিজে পাওয়া আর দেশকে বঞ্চিত করে নিজে লাভবান হওয়া। এটাই প্রতিটি দলীয় শিক্ষকের কোর ভাবনা। একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ কীভাবে নিজেকে হাঁড়িপাতিলের ঢাকনার মতো নিজের চিন্তা চেতনাকে ঢেকে রাখে? বাড়তে দেয় না। মুক্তচিন্তা করতে দেয় না। আজ শিক্ষায় জিডিপির কেবল ২ শতাংশের আশপাশে বরাদ্দ দেয় অথচ এর কোনো প্রতিবাদ নেই। নেই বেশি বরাদ্দের দাবি। ছাত্ররা মানবেতর জীবনযাপন করে তাদের জন্য নেই কোনো দাবি। গবেষণার নেই কোনো পরিবেশ তার জন্য নেই কোনো দাবি। বরং বলতে শুনি এই সরকার নাকি শিক্ষাবান্ধব। গবেষণায় নাকি অনেক দিয়েছে ইত্যাদি। যা দেয় তা নিয়েই যদি এ রকম স্তুতি গান তাহলে কোন সরকার আমাদের বেশি বরাদ্দ দেবে? দেশের সব সমস্যার মূলে হলো মানহীন শিক্ষা। অথচ কোথাও কোনো রা নেই। এই কোন ডোবাখানায় বাস করছি? ফেসবুক থেকে