শ্রমিকের দাবি মেনে নেওয়ার পরও থামছে না আন্দোলন
দেশের শিল্পঘন এলাকাগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব শ্রমিক আন্দোলন বা শ্রমিক অসন্তোষ চলছে, সেগুলোকে ‘পোশাকশিল্প ধ্বংসের চক্রান্ত’ বলে দাবি করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। পোশাকশিল্পের অস্থিরতা নিয়ে তারা বলছেন, রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগ নেতৃত্ব দিচ্ছে পোশাকখাত। শ্রমিকের সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও আন্দোলন থামছে না। এ থেকে বোঝা যায় এর পেছনে তৃতীয় কোনো পক্ষ কলকাঠি নাড়ছে।
শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীতে ‘পোশাকশিল্পের চলমান অস্থিরতা দূরীকরণে করণীয়’ শীর্ষক বিজিএমইএ’র সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় শিল্প উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে এসব কথা উঠে আসে। সভায় সভাপতিত্ব করেন ফোরাম সভাপতি এম এ সালাম। বক্তব্য রাখেন পোশাকশিল্প খাতের উদ্যোক্তারা।
স্বাগত বক্তব্যে ডাকসুর সাবেক সদস্য, ফোরাম সাধারণ সম্পাদক এবং নেক্সাস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রশিদ হোসাইনী বলেন, পোশাকশিল্পের অরাজকতা এবং শ্রমিক অসন্তোষের নামে যারা দেশের অর্থনীতিকে ধুলিস্যাৎ করতে চায়, যারা শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করে না, তাদের পরিচয় তুলে ধরতে হবে। তাদের কারণে সৎ শিল্পমালিকরা বেকায়দায় থাকেন।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক লুৎফর আমিন বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রচার হয়েছে তার সমাধান নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছেন না। ভাঙচুর, হুমকি চলছে। আমার কারখানা ভাঙচুর না হলেও পাশেরগুলোর অবস্থা ভালো না। সাভারে শ্রমিক বিক্ষোভে সড়কে ৩০ কিলোমিটার যানজট তৈরি হলো। সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে কথা বলে চলে যায়, পুলিশ তো আসেই না।
‘শিল্প পুলিশ আমাদের পাসপোর্ট সম্পর্কে জানতে চায় কেন? দেশের অর্থনীতির জন্য এতকিছু করার পর কেনো আমাদের ভিলেন হতে হবে’- প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ বলেন, বিগত ৩০ দিন ধরে যে সদস্যদের কারখানা বন্ধ হয়েছে আজ তাদের কথা বলার সুযোগ হয়েছে। যারা আশুলিয়ায় আক্রান্ত কারখানার মালিক তারা আজ আসেননি কেন। আজ বিজিএমইএ সদস্যরা হতাশ। আজ আপনার কারখানায় সমস্যা, কাল যে আমার সমস্যা হবে না এটার গ্যারান্টি নেই। সবাইকে সমাধান নিয়ে কথা বলতে হবে।
রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, এই মুহূর্তে আশুলিয়ায় যা হচ্ছে সেটা শ্রম আইন সমস্যা নয়, সেটা আইনশৃঙ্খলা সমস্যা। যে আইন ভঙ্গ করবে তাকে আইনের আওতার আনার দাবি জানিয়ে আসছি। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলেও তা ব্যবহার হচ্ছে না। আইন ভঙ্গের জন্য জেল হলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো।
তিনি বলেন, অতীতেও তো এ ধরনের সমস্যা ছিল, এখন কেন সমাধান হবে না। এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব, তারা দায়িত্ব পালন করছেন না বা করতে পারছেন না। আমার ছয়টি কারখানার মধ্যে সবগুলোতে সর্বনিম্ন বেতন ২৪ হাজার টাকা। এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, দর কষাকষি বা নিজেদের দাবি আদায় করার বিষয়ে মুখ খুঁজে পাচ্ছি না। অথচ এটা ফোরাম বা বিজিএমইএর দাবি না। প্রধান উপদেষ্টা পোশাক খাত নিয়ে ভীষণ বিচলিত, সমাধান খুঁজছেন। উনার মতো বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বকে ব্যবহার করতে না পারলে সেটি আমাদের (বিজিএমইএ) ব্যর্থতা।