নির্বাচন কমিশনের কথা আর কাজের কোনো মিল নেই : তাবিথ
পুলিশ পেটালে অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয় কিন্তু সাংবাদিক পেটালে অপরাধীদের কিছু হয় না বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য সমাপ্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেছেন, পুলিশের গায়ে হাত দেয়ার অপরাধে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকদের মারার অপরাধে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। একটি সভ্য দেশে এটা হতে পারে না।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর গুলশানের ইমানুয়েলস হলে নির্বাচন পরবর্তী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের দিন নানা অনিয়ম, কারচুপি, পুলিশি হয়রানির অভিযোগের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তাবিথ আউয়াল।
তাবিথ বলেন,‘নির্বাচনের দিন কেবল বিএনপির নেতাকর্মী বা সমর্থকরা হামলার শিকার হননি। ওই দিন নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন।’
তাবিথ আউয়াল বলেন, ১ ফেব্রুয়ারী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল আমি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা দাবি করছি, সকল কর্মকম বন্ধ রেখে নির্বাচন কমিশন সকল তথ্য, ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিট সি থেকে শুরু করে রেজাল্ট সীট জনগণের সামনে এবং যারা প্রার্থী ছিলাম তাদের সামনে প্রকাশ করবে।
তাবিথ আউয়াল বলেন, এই নির্বাচন শুরুই হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পিত হামলার মধ্য দিয়ে। এতে সংবাদ কর্মীরা আহত হয়েছেন। আমাদের পোলিং এজেন্ট যথাসময়ে কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে বাইরে নিয়ে পেটানো হয়েছে। যাদের অনেকে এখনো হাসপাতালে আছে। এ সকল হামলার বিষয়ে আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার প্রসঙ্গে বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী বলেন, নির্বাচনের আগে থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাদের হুমকি শুরু হয়ে গিয়েছিলো, তাদের গুণ্ডাবাহিনী পেশিশক্তি ব্যবহার করে কেন্দ্র দখল করবে। নির্বাচনের দিন শুরুতে সমস্ত কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার গুণ্ডা ও কর্মী অবস্থান করে গেইট বন্ধ রাখে। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি। যে কারণে বেশিরভাগ ভোটার কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি। তাদের বড় ভয় ছিলো ভোটাররা। কারণ ভোটাররা ছিল আওযামী লীগের বিপক্ষে।
সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও চিত্র দেখিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, ভোটকেন্দ্রে বানানো লাইন দাঁড়ানো ছিল, যে কারণে ভোটাররা কেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি। একটা বানানো লাইন দিয়ে তাদের দমিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে পরিষ্কারভাবে প্রমাণ হয়, আমাদের প্রতিপক্ষের কৌশলও ছিল ভোটাররা যেন ভোটকেন্দ্রে না প্রবেশ করতে পারে। প্রবেশ করতে পারলেও কেন্দ্রের ভিতরে গিয়ে ভোট না দিতে পারে।
বিভিন্ন আইনি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাবিথ বলেন, আইন ছিল এক একটা কেন্দ্রে একজন প্রার্থীর একজন করে পোলিং এজেন্ট থাকবেন। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি একাধিক পোলিং এজেন্ট ছিল কেবল একটি দলের প্রার্থীর জন্য। যখন একজন ভোটার ফাইনালি গোপন কক্ষে যাওয়া সম্ভব হয়েছে, তখনও গোপন কক্ষে একজন মানুষকে দেখা গেছে যারা সহযোগিতার নামে ভোটারদের চাপ প্রয়োগ করছে।
তিনি বলেন, বলা হয়েছিল ইভিএমে রেজাল্ট অতি দ্রুত, চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে রেজাল্ট দেয়া হবে। তার মানে রাত ৯টার মধ্যে সকল রেজাল্ট প্রকাশ করা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ভোর চারটা পর্যন্ত। এরপরও আমরা শুধু মৌখিক রেজাল্ট পেয়েছি। লিখিত কোন রেজাল্ট আমরা পাইনি। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনের তাদের কথা আর কাজের কোনো মিল নেই। আমরা মনে করি এখানে ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং চুরি করা হয়েছে, অনেক ভোট বদলানো হয়েছে। সে কারণে ভোর চারটা পর্যন্ত তাদের সময় লেগেছিল।
ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বলা হয়েছিলো কন্ট্রোল ইউনিটের প্রিন্ট দেয়া হবে। কিন্তু আমরা এখনো তা পাইনি। অপেক্ষায় আছি। আদৌ পাবো কিনা এ নিয়ে আমাদের সন্দেহ অবশ্যই আছে। তৃতীয় হলো, সমস্ত লগ রাখা যায় আমরা শুনেছি। যদি সমস্ত লগ রাখা হয়ে থাকে আমরা দাবি জানাচ্ছি, নির্বাচন কমিশনকে সকলের সামনে স্বচ্ছ থাকার জন্য এই লগ পেশ করা হোক। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারব কন্ট্রোল ইউনিটে কি লেখা ছিল, রেজাল্ট কি এসেছে, ফাইনালি মৌখিক রেজাল্টে কি আমরা পেয়েছি।
তাবিথ অভিযোগ করেন, ২৯ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে একটি গাইডলাইন দেয়া হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, বিকেল ছয়টার মধ্যে সমস্ত রেজাল্ট যেন প্রার্থীদের কাছে রিটার্নিং কর্মকর্তা পেশ করে দেন। কিন্তু তারা সেই গাইডলাইন অনুসরণ করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান, বরকত উল্যাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, এলডিপির (একাংশ) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন।