নির্বাচনী সহিংসতা, কাউন্সিলর খোকনসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম সাংবাদিকদের
ঢাকা সিটি নির্বাচনের দিন পেশাগত দায়িত্বপালনে গিয়ে নৃশংস হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান সুমন। তার অপরাধ তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর খোকনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রকাশ্যে মহড়ার ছবি তুলছিলেন। তাতেই খোকনের লোকজন সুমনকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালান।
এ ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় কাউন্সিলর খোকন ও তার সহযোগীদের আসামি করে হত্যা চেষ্টায় মামলা দায়ের করা হয়। এই ঘটনার ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। অথচ, ঘটনার দিনই র্যাবের মহাপরিচালক ও র্যাব-৩ এর অধিনায়ক সাংবাদিক সুমন ও তার সহকর্মীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন- যত দ্রুত সম্ভব ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন।
ওই আশ্বাসের পরের দিনই কাউন্সিলর খোকন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সুমনকে বিষয়টি ভুলে যেতে বলেন এবং মামলা দায়ের করতে নিষেধ করেন। এমন প্রস্তাবের প্রতিবাদ করলে, কাউন্সিলর সাংবাদিক সুমনকে উল্টো দেখে নেবেন বলে হুমকি প্রদান করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি নবনির্বাচিত কাউন্সিলর খোকনসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা দিব্যি বুক ফুলিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। অন্যদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুমন কাউন্সিলর খোকনের হুমকিরতে জীবন ঝুঁকিতে রয়েছেন।বুক ফুলিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নবনির্বাচিত কাউন্সিলর খোকন।
এমন পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আন্তরিকতা ও এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে তাদের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিক নেতারা। ঘটনার দুইদিনের মাথায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রামপুরা থানায় পুলিশের বিশেষ শাখা-এসবির এক পরিদর্শককে মারধরের অভিযোগে রামপুরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত নবনির্বাচিত কাউন্সিলর সাখাওয়াত হোসেন শওকতসহ ৮ জনকে। মারধরের ঘটনায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল মজিদ বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় একটি মামলা (নং ৭) দায়ের করেন। গ্রেপ্তার হওয়া শওকত ২৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সাংবাদিক নেতারা প্রশ্ন তোলেন- সাংবাদিক হত্যা চেষ্টার মামলায় কাউন্সিলর খোকন ও তার সহযোগীদের এখনো কেউ গ্রেপ্তার না হলেও, ওই ঘটনার দুই দিন পর পুলিশ পেটানোর মামলায় ঠিকই নবনির্বাচিত কমিশনার শওকত ও তার সহযোগীদের দ্রুতই গ্রেপ্তার করা হয়। আমরাও চাই সুমনের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একই রকম তৎপরতা দেখাক। আমরা কোন বৈষম্য চাই না।
সিটি নির্বাচনের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার (৪ ফ্রেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি (আরডিজেএ)। ওই সময়ে হামলাকারীদের আগামী শনিবারের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
সমাবেশে ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্য, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) এর সভাপতি আবুল খায়ের, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ডিআরইউ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুক্কুর আলী শুভ, রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মোকছুদার রহমান মাকসুদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অমিয় ঘটক পুলক, সাব এডিটর কাউন্সিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কেএম ওবায়দুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল লতিফ বলেন, ঘটনায় যেহেতু মামলা দায়ের হয়েছে, সেহেতু আসামিরা অবশ্যই গ্রেপ্তার হবে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। ডিসি স্যারের নির্দেশে অলরেডি ৩/৪ জন অফিসারকে অভিযানে নামিয়ে দিয়েছি। হামলার ঘটনার মোবাইলের ভিডিও ক্লিপ ও কিছু স্টিল ফটো আমাদের হাতে এসছে। এর উপর ভিত্তি করে অভিযান চলছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। এ সংক্রান্তে সিসি ক্যামেরার কোন ফুটেজ এখনো পাওয়া যায়নি।