কারচুপি যেভাবে সহজ হলো
অব্যবস্থাপনা, জালিয়াতি, কারচুপি, নির্বাচনের নামে ধোঁকাবাজি এগুলো ইভিএম মেশিনে ভোট হওয়া না হওয়ার সাথে সম্পর্কিত নয়। বরং তারা বলছেন ইভিএম মেশিনে কারচুপি সম্ভব নয়। হ্যাঁ মেশিনে সম্ভব নয়; তবে কারচুপি কিভাবে হয় বা হলো সেটা বলার জন্য ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভোটের দিনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরছি।
ভোটারের সংখ্যা কম। তার মধ্যে তরুণদের উপস্থিতি যেন নেই। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত যেখানে ভোটগ্রহণ, সেখানে একটি বুথে (উল্লেখ্য, সেই বুথে আমার এক নিকটাত্মীয় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে ছিলেন) প্রায় তিন শ’র ওপর ভোটার থাকলেও বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটেও ভোটার উপস্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১৬ তে। এরই মধ্যে খোদ আওয়ামী প্রার্থী, তাদের পোলিং এজেন্টসহ পুলিশ নিয়ে হাজির এবং প্রিজাইডিং অফিসারদের আদেশ দিচ্ছেন – ‘ভোটার ২০০ করা লাগবে। আপনারা নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করুন।’
এখানে বলে রাখি – সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের ইভিএম মেশিনে নিজের অঙুলের ছাপ দিয়ে অন্যের হয়ে সর্বোচ্চ পাঁচটি ভোট দেয়ার ক্ষমতা থাকে। এটা মূলত যারা প্রতিবন্ধী বা যাদের আঙুলের ছাপে সমস্যা আছে। যেমন – একজন ভোটার নিজের আইডি কার্ড সহকারেই এলেন, কিন্তু তার ছাপ মিলছে না, তার হাত এসিডদগ্ধ ছিল।
সেক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসার যে সুবিধা তাকে দিতে বাধ্য তা হলো – তার আইডি শনাক্ত করে, অফিসার নিজের আঙুলের ছাপ দেবেন এবং মেশিন সেটা গ্রহণ করে তাকে ভোট প্রদানের সুযোগ দেবে। এরূপ সিস্টেম মেশিনে করা আছে। ব্যক্তির বৃদ্ধাঙ্গুল, তর্জনী আঙুল – এরূপ চারটি আঙুল বসালেও যদি পরিচয় মেশিনে যাচাই না হয়, সেক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা অবস্থায় অফিসার মেশিনে নিজের আঙুলের ছাপ দেবেন এবং তা গ্রহণ করা হবে। সুতরাং প্রতিবন্ধী বা সমস্যাজড়িত মানুষদের ক্ষেত্রে অফিসারদের এই ক্ষমতা প্রয়োগের দাবি থাকলেও এই ক্ষমতাই নির্বাচনে ব্যবহার করা হচ্ছে অন্যায়ভাবে। যেমনটি বলছিলাম, প্রার্থী সেই সাথে পুলিশও আমার আত্মীয়কে জোর করে তার পাঁচটি ভোট প্রদানের কোটা পূরণ করতে বলেন। একই অবস্থা অন্যান্য বুথেও। শুধু তাই নয়, যখন ভোট শেষের আর কিছু সময় বাকি, তখন গোপন কক্ষগুলোতে আওয়ামী পোলিং এজেন্টরা ঢুকে ভোটারদের জোর করে নিজেদের মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করে। ফলাফল… অবশেষে কারচুপি জয়যুক্ত হলো।
সুতরাং দোষ মেশিনের নয়, ব্যবস্থাপনার। আর অতীত ও বর্তমানের (তা ভোট ব্যালটে হোক বা ইভিএমে) এই অব্যবস্থাপনার কারণে আজ সমাজের অধিকাংশই ভোট বর্জন করছেন। নির্বাচন থেকেই যেন তাদের আগ্রহ উঠে যাচ্ছে। যেখানে নির্বাচন হচ্ছে শুধু আইওয়াশ আর জনগণের অধিকারের সাথে খেলা করার মতো। আসলে সরকার নির্বাচনের পরিবেশ দিতেই ব্যর্থ।