আরও ২ কেন্দ্রে ফল পাল্টে দেয়ার অভিযোগ
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরও দু’টি ওয়াডের্র ফলাফল পাল্টে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নতুন করে অভিযোগ ওঠা এই দুই ওয়ার্ড হলো- দক্ষিণের ৩২ নং এবং উত্তরের ৬নং। এর আগে একই অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণের ৩১ নং ওয়ার্ডের ফলাফল স্থগিত করা হয়।
ঢাকা দক্ষিণের ৩২নং ওয়ার্ডের সঠিক ফল ঘোষণা এবং ভোট পুনঃগণনার জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করেছেন ঠেলাগাড়ী প্রতীকের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. বিল্লাল শাহ। তিনিও অভিযোগ করেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা না করে মৌখিকভাবে ফল ঘোষণা করা হয়। এই ফল জালিয়াতি আর গরমিলে ভরপুর।
এদিকে অর্থের বিনিময়ে ফলাফল পাল্টানোর অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির ৬নং সাধারণ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত মো. সালাউদ্দিন রবিন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগে রবিন (টিফিন ক্যারিয়ার মার্কা) উল্লেখ করেন, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর গণনার সময় তার এজেন্টদের মৌখিকভাবে বিজয়ী বলে কেন্দ্র থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়। রিটার্নিং অফিসের বরাতে বিভিন্ন টেলিভিশন এবং অনলাইনে সালাউদ্দিন রবিনকে বিজয়ী করে সংবাদ পরিবেশন হয়। কিন্তু রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে নাম পরিবর্তন করে বিদ্রোহী প্রার্থী তাজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং জালিয়াতি।
সালাউদ্দিন রবিন বলেন, দ্বিগুণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলুদ্বী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ এবং পল্লবী মাজেদুল ইসলাম মডেল হাইস্কুল কেন্দ্রে তার এজেন্টের কাছে ফল ঘোষণার লিখিত কপি সরবরাহ করা হয়নি। এই তিন কেন্দ্রের ফল পরিবর্তন করে তাকে হারানো হয়েছে। ইসির সংশ্নিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ প্রার্থীর। এ বিষয়ে উত্তরের রিটার্নিং অফিসার মো. আবুল কাশেম বলেন, মৌখিক ফলকে চূড়ান্ত বলে গণ্য করার সুযোগ নেই। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার যে ফল পাঠিয়েছেন তার ভিত্তিতেই ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে কোনো ত্রুটি থাকলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কমিশন অথবা ট্রাইব্যুনালে যেতে পারেন। তবে ঘোষণার পর ইভিএম লক করা হয়েছে। এটি একমাত্র ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পুনঃগণনা সম্ভব বলে মত দেন তিনি।
ফল ঘোষণার সময় ফল পাল্টে দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন একাধিক সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারা বলছেন, এর সঙ্গে ইসির দায়িত্ব প্রাপ্তরাও জড়িত রয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণের ৩১নং ওয়ার্ডের প্রার্থীর অভিযোগ আমলে নিয়ে ফল ঘোষণা স্থগিত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার এ দুই সিটি নির্বাচনের পর ওই দিন রাতেই ফল ঘোষণা করা হয়।
ইসি সংশ্নিষ্টরা জানান, ফল জালিয়াতি করে ভোটে হারিয়ে দেয়ার অভিযোগ ইসিতে জমা দিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আলমগীর। আরমানি টোলা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটের সংখ্যা উল্টে দিয়ে প্রতিপক্ষকে জিতিয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। প্রথম দিকে তার অভিযোগ আমলে না নিলেও দ্বিতীয় দফায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ভোটের ফল স্থগিত করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন। তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
এই ওয়ার্ডে পোলিং এজেন্টদের কাছ থেকে পাওয়া হিসাবে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী জিতেছেন ২৭ ভোটে। কিন্তু রাতে প্রকাশিত বেসরকারি ফলে টিফিন ক্যারিয়ার মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী জুবায়েদ আদেলকে ২১০ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত (ঝুড়ি মার্কা) প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, সব ক’টি কেন্দ্রের ফল যোগ করে আমার জয়ী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছিল। রাতে সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমিতে ফল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে তার পরিবর্তে অন্যজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্র থেকে পাওয়া প্রিন্টেট কপির হিসাবে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়-২ পুরুষ কেন্দ্রে তিনি পান ৪৪৯ ভোট। কিন্তু ঘোষণায় দেখানো হয়েছে ২০২ ভোট। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইরোজ আহমেদের ঘুড়িতে পড়েছে ৪৩৯ ভোট। আর বিজয়ী ঘোষণা করা স্বতন্ত্র প্রার্থী জুবায়েদ আদেলের টিফিন ক্যারিয়ার মার্কায় পড়ে ২২৬ ভোট। তিনি বলেন, সব সেন্টার মিলিয়ে টিফিন ক্যারিয়ারে দেখানো হয় ২৪৪৫ ভোট। আর তাকে দেখানো হয় ২২৩৫ ভোট। একটি কেন্দ্রের ফল যোগ না করায় ২০০-এর বেশি ভোটের ব্যবধানে তাকে পরাজিত দেখানো হয়। পরে তিনি লিখিতভাবে চ্যালেঞ্জ করলে ফল স্থগিত করা হয়।