ঢাকার ভোটে ভিলেন কে? ফেসবুক, ঘুম, না কোরমা-পোলাও
মুরব্বীরা বলতেন, যায় দিন ভালো যায়। কেন, বলতেন তা যতোদিন যাচ্ছে ততো স্পষ্ট হচ্ছে। নতুন কোনো ঘটনা ঘটে। আমরা কোরাস গেয়ে উঠি, আগেরটাই ভালো ছিল। আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম গান তো আর এমনি এমনি জনপ্রিয় হয়নি। যদিও এটা সত্য, আগেও সুন্দর দিন কাটাতাম না।
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়ে গেল। নানা আলোচনা, সমীকরণ। ঢাকার মিডিয়া গান গাইছে, কেন এতো কম ভোটার।
ভোটাররা কেন গেলো না? কিছু কিছু বুদ্ধিজীবীও সুর মিলিয়েছেন এ গানে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা নিজেদের মতো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন যেটা সেটা বোধহয় তেমন আলোচনা হচ্ছে না। যে ভোটাররা ভোট দিতে গেছেন, যাদের গলায় কোন রাজনৈতিক দলের ব্যাজ ছিলো না, তারা কি সম্মানের সঙ্গে ভোট দিতে পেরেছেন। তারা কি নিজের ইচ্ছানুযায়ী ভোট দিতে পেরেছেন। নাকি তাদের অনেকেই গোপন বুথে লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন। তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভোট দিতে। দক্ষিণে এক তরুণী ভোট দিতে না পেরে যেভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এই মানুষটার এই ক্ষোভের কি কোন জবাব আছে কারও কাছে? এই যে অপমানিত ভোটাররা তারা কি আর ভোট দিতে যাবেন কখনও। ২০১৪ সালে জনগণ ভোট দিতে গিয়ে ককটেল আর অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে তারা দেখেছেন, আগেই তাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। এই অভিজ্ঞতার পর কেন তারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন সেই প্রশ্নের জবাব কি আগে খোঁজা প্রয়োজন নয়।
কেন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ভোট দিতে গেলেন না এ নিয়ে নানা আলোচনা। এক মন্ত্রী বলেছেন, যারা ভোট দিতে আসেনি তারা বাসায় কোরমা-পোলাও খাচ্ছেন। ভোটের দিন সকালে এক রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, যেটা সত্য ভোটার উপস্থিতি আসলে কিছুটা কম। আপনারা জানেন গতকাল শুক্রবার ছিল, আজ শনিবার। ইয়াং জেনারেশন একটু দেরিতে উঠে। আমার মনে হয় একটু পরে হয়তো ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। আর গতকাল নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. আলমগীর ভিলেনের তালিকায় ফেসবুকের নামও যোগ করেছেন। অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজে তার বক্তব্য পড়েছি। কেন কম ভোট পড়লো এটা গবেষণার বিষয় জানিয়ে তিনি বেশ কিছু কারণ বলেছেন। তার কথা-‘তাছাড়া জনগণ ছুটি পেয়েছে, অনেকে ছুটি ভোগ করেছে। ছুটি পেলেই মানুষ বাইরে চলে যায়। কেউ কেউ ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত ছিল।’ ফেসবুক নিয়ে এখন দেশে দেশে নানা আলোচনা। বিশেষ করে ভোট আসলে ফেসবুকের ভূমিকা নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়াতেও আলোচনা হয়। তবে ফেসবুকের কারণে মানুষ ভোট দিতে যায় না সম্ভবত এটা ইতিহাসে এক নব আবিষ্কার। যদিও মাননীয় মন্ত্রী এবং প্রজাতন্ত্রের মাননীয় দুই কর্মকর্তা যা বলেছেন, তা নিয়ে সারা দুনিয়াতেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা গবেষণা করতে পারেন।
ভোট আসে, ভোট যায়। জনগণ নিজেদের ক্রমশ আরো অসহায় অবস্থায় আবিষ্কার করে।