মানবসেবায় উদ্বুদ্ধকরণে দুর্দান্ত প্রয়াস এবারের ‘ইত্যাদি’
কল্যাণকর নানা বিষয় আর ঘটনা তুলে ধরার ক্ষেত্রে ইত্যাদি’র ভূমিকা অতুলনীয়। এমন চিত্র বরাবরের। এবার প্রচার হওয়া ইত্যাদি’তেও ছিল তেমন কিছু আয়োজন। বিশেষ করে স্নায়ুবিক বিকাশগত সমস্যায় আক্রান্তদের নিয়ে মানবিক ও উদ্বুদ্ধকরণ প্রতিবেদন এবং ঠাকুরগাঁওয়ের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী শিক্ষানুরাগী সুখী আক্তারের জীবন সংগ্রামের ওপর হৃদয়স্পর্শী প্রতিবেদন দুটি ছিল বেশ আবেগী। পাশাপাশি অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবেশিত কয়েকটি নাট্যাংশ দেখে অনায়াসেই বলা যায়, এবারের ‘ইত্যাদি’ ছিল মানবসেবায় উদ্বুদ্ধকরণে দুর্দান্ত প্রয়াস। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র এবং মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্থানসমূহে গিয়ে ধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের ‘ইত্যাদি’ ধারণ করা হয়েছিল হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত আঁকা বাঁকা সীমান্ত পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবদীপ্ত এ উপজেলার তেঁতুলিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক মাঠে বিশেষ মঞ্চ নির্মাণ করে সেখানে ধারণ করা হয় এ পর্বের সিংহভাগ আয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের বাছাই, প্রশিক্ষণ, গোলাবারুদ সংরক্ষণ ও বিতরণ করা হয়েছিল এই মাঠ থেকেই।
নদী ও ভূমি থেকে পাথর উত্তোলন, সমতল ভূমিতে চা বাগান, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা এবং পঞ্চগড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে নির্মাণ করা হয়েছিল আলোকিত মঞ্চটি। এর সামনে ছিল অসংখ্য দর্শকের উপস্থিতি। বরাবরের মতো এমন আকর্ষণীয় পরিবেশে এবারের ইত্যাদি’র ধারণ দারুণ ভালো লাগায় আচ্ছন্ন করেছে। শিকড় সন্ধানী ইত্যাদি’তে যেমন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের খুঁজে এনে তুলে ধরা হয় তেমনি গত প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে দেশি-বিদেশি অচেনা-অজানা স্থানের তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে এ অনুষ্ঠান। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ছিল পঞ্চগড়ের ইতিহাস, ঐতিহ্যের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোর ওপর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। সে সঙ্গে দেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর রকস্ মিউজিয়াম এবং পঞ্চগড়ের সমতলে চা চাষের ওপর ছিল দু’টি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। এ আয়োজনগুলোর প্রতিটিই বেশ উপভোগ্য হয়েছে। পঞ্চগড় জেলা ও তেঁতুলিয়ার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় নিয়ে একটি গানের সঙ্গে স্থানীয় প্রায় দেড় শতাধিক নৃত্যশিল্পীর পরিবেশিত নাচ এবং তরুণ জাদুকর রাজিকের জাদুও খুব ভালো লেগেছে। এগুলোর পাশাপাশি প্রতিবারের মতো এবারের ইত্যাদি’র নিয়মিত অন্য পর্বগুলোও ছিল বেশ উপভোগ্য। সব মিলিয়ে মনোজ্ঞ একটি আয়োজন উপহার দেয়ার জন্য অভিনন্দন ইত্যাদি’র নির্মাতা হানিফ সংকেতকে। সে সঙ্গে ধন্যবাদ কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডকে দীর্ঘদিন ধরে এমন চমৎকার একটি অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রাখার জন্য।