দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি বিভীষিকাময়: আসকের বার্ষিক পর্যবেক্ষণ

0

দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি বিভীষিকাময় বলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক পর্যবেক্ষণে তুলে ধরা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা আসকের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদায়ি বছরে সারা দেশে ৪৭৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন। ৬ হাজার ৯১৪ জন আহত হন। ১৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার এবং পাঁচজন অপহরণ, গুম ও নিখোঁজ হয়েছেন। ২০২২ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরতে শনিবার আসক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

রাজধানীতে আসকের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, কারাগার বা ডিটেনশন সেন্টার বা ইন্টারোগেশনের (জিজ্ঞাসাবাদের) জায়গাগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কারণ এগুলো আমাদের আইন ও সংবিধান সমর্থন করে না। যারা এগুলো পরিচালনা করেন তাদের চিহ্নিত করা উচিত। দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি বিভীষিকাময় বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি মাকাল ফলের মতো। যেমন ধরুন, লেপে প্যাঁচিয়ে মানুষকে পেটানো হলে তার ভেতর রক্তক্ষরণ হবে; কিন্তু বাইরে থেকে কিছু বোঝা যাবে না।

নূর খান আরও বলেন, বিচারবহির্ভূত সব তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। গুম, খুন ও অপহরণের ঘটনা বন্ধে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশন চিহ্নিত করবে এ ধরনের তৎপরতার সঙ্গে কারা জড়িত। জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বিচারবহির্ভূত প্রতিটি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই। দেখেছি, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত একটা পর্যায়ে গিয়ে থেমে যায়। তাই প্রতিটি ঘটনার স্বাধীন তদন্ত হওয়া দরকার।

২০২২ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আসকের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংস্থাটির পরিচালক নিনা গোস্বামী ও সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল কবির। এ সময় কিছু সুপারিশও তুলে ধরেন তারা।

আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ি বছরে ১ হাজার ৬৯৪টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ১২৬ নারী খুন হয়েছেন। ৯৩৬ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ১২ নারী অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। ১ হাজার ৪৫ শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনায় ৪৭৪ শিশু নিহত হয়েছে। গত বছর সীমান্তে ২১ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। গণপিটুনিতে ৩৬ জন মারা গেছেন। কারা হেফাজতে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ২০২২ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর ১২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২২৬ সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন।

পরিস্থিতির পরিবর্তনে সংস্থাটি ১৪ দফা সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার যথাযথভাবে চর্চা করার পরিবেশ তৈরি, গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা এবং সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এ আইনে মামলা গ্রহণ না করার নির্দেশনা দেওয়া। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর যে কোনো ধরনের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা’ যেমন: বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুমের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এখতিয়ারবহির্ভূত আচরণ প্রভৃতির অভিযোগ উঠলে তা দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা, এ পর্যন্ত সংঘটিত সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com