হাইকোর্টের সামনে বিএনপির অবরোধ গাড়ি ভাঙচুর

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকায় বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এ সময় বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়াধাওয়ি হয়েছে। ভাঙচুরের শিকার হয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়ি।

গতকাল দুপুর ১টার পর হাইকোর্টের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ছোট ছোট দল এসে সম্মিলিতভাবে হাইকোর্টের দিকে এগোতে থাকে। তারা হাইকোর্টের প্রধান ফটক থেকে মাজার গেট পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। মিছিলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা অংশ নেন।

আদালতের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অবস্থানের একপর্যায়ে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের ওপর ইট- লাঠি ছোড়েন কিছু নেতাকর্মী। পুলিশ পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিচার্জ করলে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। ওদিকে হাইকোর্টের ভেতর বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মিছিল বের করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা দল সমর্থিত মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দলের একটি অনুষ্ঠান ছিল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু হাইকোর্টে নিজের ব্যস্ততার কথা জানিয়ে অনুষ্ঠানে যাননি তিনি। এ অবস্থায় প্রজন্ম দলের নেতাকর্মীরা দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করে মিছিল বের করেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, শওকত মাহমুদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানসহ শতাধিক নেতাকর্মী বিক্ষোভে মিছিলে অংশ নেন।

দুপুর ১টার দিকে নেতাকর্মীরা জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে মিছিল বের করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে তাঁরা কদম ফোয়ারা পেরিয়ে হাইকোর্টের মূল ফটকের সামনে মোড়ে অবস্থান নেন। এতে প্রেস ক্লাব থেকে মৎস্য ভবনের দিকে যাওয়ার রাস্তায় প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি এবং পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে স্লোগান দেন। এ সময় আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমরা কোনো অসাংবিধানিক কাজ করছি না। দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার নেতাকর্মী ঘর ছেড়ে আজ রাজপথে নেমেছে। রাজপথই আমাদের ঠিকানা। যতক্ষণ পারি ততক্ষণ অবস্থান করব। পুলিশ যেন আমাদের উসকানি না দেয়।’

নোমানের বক্তব্য শেষ না হতেই পুলিশ নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার উদ্যোগ নিলে তাঁরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছোড়েন। শুরু হয় দুই পক্ষে ধাওয়াধাওয়ি। আতঙ্কিত পথচারীরা ছোটাছুটি শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পল্টনের দিকে চলে যান। এ সময় সড়কের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের শিকার হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তায় কোর্ট এলাকায় ব্যাপক পুলিশ নিয়োজিত ছিল। বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য কোর্টের সব গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।

এর আগে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা সংহতি সমাবেশে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আজ দেশের যে অবস্থা তাতে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ভূলুণ্ঠিত। সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাইলে রাজপথে নামতে হবে।

ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির শিরিন সুলতানা, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের নেতা রুহুল আমিন গাজী, কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Comments (০)
Add Comment