গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি — মির্জা আলমগীর

ডিএল ডেস্ক: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের সামনে একটি মাত্র লক্ষ্য। আর সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য গণঅভ্যুত্থান গড়ে তোলা।’ তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রীর মুক্তির লক্ষ্যে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।’

রোববার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘দেশকে এর থেকে রক্ষার একটি মাত্র উপায় সেটি হলো গণঅভ্যুত্থান। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওই সরকারের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর গণঅভ্যুত্থান ঘটনার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।’

মির্জা আলমগীর বলেন, ‘এই সরকার জনগণের ম্যান্ডেটে নির্বাচিত নয় তাই তাদের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা আজ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। সরকার সুপরিকল্পিতভাবে এ রাষ্ট্রেকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার বাংলাদেশকে লুটতরাজের রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও মামলার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা ছিল চারটি আর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি। প্রধানমন্ত্রীর মামলাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে আর আমাদের নেত্রীর মামলা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

 সকাল ১০টায় পুলিশ বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এরপরে আমরা আর কোনো সমাবেশের অনুমতি নিব না। সভা সমাবেশ আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার তাই আমরা আমাদের যখন ইচ্ছে সভা সমাবেশ করব। দেশনেত্রী মুক্তির লক্ষ্যে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।’

মির্জা আলমগীর আরো বলেন, ‘আমরা দেখেছি এই সরকার আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমাদের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজকের এই সমাবেশ করা জন্যও সকাল ১০টায় অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরপর আমরা কোনো সভা সমাবেশ করার জন্য কোনো ধরনের অনুমতি নেব না। এরপর থেকেই আমাদের যখন প্রয়োজন হবে তখনই সভা সমাবেশ করব। আমরা রাজপথে নামব।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সারা দেশের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামতে হবে। শুধু স্লোগান আর প্রতিবাদ মিছিল করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারামুক্ত করা যাবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সেই আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান দলের শীর্ষ নেতারা।  

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনের দলের বিক্ষোভ-সমাবেশে এসব কথা বলেন মির্জা আব্বাস। সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন বিএনপির  মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুর ১২টার পর থেকেই কাকরাইল, ফকিরাপুলসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিতে শুরু করে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আসা নেতাকর্মীদের মুখে স্লোগান ছিল ‘দেশনেত্রীর মুক্তি চাই, দিতে হবে’, ‘এক জিয়া লোকান্তরে, লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে’, ‘শেখ হাসিনা গদি ছাড়ো, ছাড়তে হবে’ ইত্যাদি।

সমাবেশেকে কেন্দ্র করে নাইটিংগেল, ফকিরাপুল ও নয়াপল্টন এলাকায় রাস্তায় যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। তবে নয়াপল্টন বিএনপির কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় প্রথমদিকে একটি লেন যান চলাচলের উন্মুক্ত রাখা হয়। পরে অবশ্য সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের জনগণের অধিকার হরণ করতে খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে। তাঁর অপরাধ কী? কোনো অপরাধ নাই। বিনা অপরাধে তাঁকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। ইনশা আল্লাহ সব বাধা অতিক্রম করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। সারা দেশের নেতাকর্মীরা জেলের তালা ভেঙে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবে।

বিএনপির এই নেতা সরকারের সমালোচনা করে বলেন, পত্রিকায় দেখলাম লুটপাট না হলে দেশে অনেক উন্নয়ন হতো। কথা হলো, গত ১১ বছর কারা লুটপাট করছে? সরকারের লোকজনই লুটপাট আর চুরি করছে। আমরাও উন্নয়ন চাই, তবে লুটপাট ও চুরির উন্নয়ন চাই না।

একই সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই সরকার থাকলে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। এই সরকার পতন না হলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন না। আপনরা কি সরকার পতন আন্দোলন করবেন? যদি করেন তাহলে প্রাস্তুত হন। নেত্রীকে মুক্ত করতে হলে হাসিনার পতন করতে হবে। নেত্রীর মুক্তি চাইলে আপনারা প্রস্তুত হন।

‘বহুদিন কষ্ট করেছেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। এখন রাজপথে নামতে হবে। অধিকর আদায় করতে হবে। রাজপথে না নামলে অধিকার আদায় হবে না।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরো বলেন, ভারত আমাদের তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি না দিলেও ভারত খাবার পানি চাওয়ার পর শেখ হাসিনা ফেনী নদীর পানি দিয়ে দিল। ভারতের অভ্যন্তরের নিরাপত্তার জন্য আমার দেশের সড়ক ব্যবহারের অনুমতি দিল। তাই মনে রাখতে হবে, এ সরকারের কাছে দেশ নিরাপদ নয়। দেশকে বাঁচাতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আর সমাবেশ বা জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। সবাইকে রাজপথের আন্দোলনে নামতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরো বলেন, ’৭১ সালে স্লোগান দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়নি। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে হয়েছে। তাই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে অবশ্যই আমাদের রাজপথে আন্দোলন করতে হবে। তাহলেই আমরা ইতিহাসের পাতায় নাম লিখাতে পারব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। যেখানে এসব মামলায় জামিন হয় সাত দিনে সেখানে খালেদা জিয়াকে আজ দীর্ঘ দিন আটকে রাখা হয়েছে। তাঁর জামিন হয় না।

‘খালেদা জিয়াকে তাঁর অধিকার জামিন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর জবাবদিহি সরকারকে করতে হবে। এ সরকার চেয়েছিল খালেদা জিয়াকে বাহিরে রেখে নির্বাচন করতে। সেই জন্য তারা তাঁকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করে রেখেছে। আমরা তাঁকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি থাকতে দেব না।’

মঈন খান আরো বলেন, এ সরকার খালেদা জিয়াকে তাঁর চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। তাঁর চিকিৎসা ব্যহত করছে। তাঁকে সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। এসব কিছুর জন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু বলেন, ‘একটা কথা আছে, চোরের দশ দিন গৃহস্তের এক দিন। চোরের ১০ দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন গৃহস্থের চোর ধরার সময় এসেছে। আপনারা চোর ধরতে পারবেন? চোর ধরে দেশকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।’

‘আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, বিএনপির মুখ ছাড়া সব সরকারের নিয়ন্ত্রণে। একজন সরকারদলীয় সাধারণ সম্পাদকের মুখে এমন কথা মানায় না। সরকারের কাজ হলো জনগণের জানমাল, সম্পদ অধিকার রক্ষা করা, নিয়ন্ত্রণ করা না। কিন্তু তাঁরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কিন্তু টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, খুন, গুম ধর্ষণ কোনোকিছুই নিয়ন্ত্রণে নেই। দ্রব্যমূল্য হু হু করে বাড়ছে। কোনো কিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই’, যোগ করেন খসরু।

বিএনপির নেতা আমীর খসরু আরো বলেন, ‘যে দেশে আইনের শাসন নাই সেখানে খালেদা জিয়া আইনের মাধ্যমে মুক্ত হবে তা বিশ্বাস করার কারণ নাই। সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের মহানায়কেরা যেভাবে মুক্ত হয়েছেন খালেদা জিয়াকেও সেভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আজকেখালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় অন্ধকার কারাগারে আছেন। তিনি কারাগারে থেকেও দেশ রক্ষার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

‘আমাদের সবাইকে রাজপথের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই সবাইকে আজ থেকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে’, যোগ করেন বিএনপির নেত্রী।

বিক্ষোভ-সমাবেশে আরো উপস্থিত আছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ।

‘অবৈধ সরকার নিপাত যাক’  

‘খালেদা জিয়ার মুক্তি পাক’ 

Comments (০)
Add Comment