দিনভর অরাজকতা শেষে রাতে ধর্মঘট প্রত্যাহার

নতুন সড়ক আইন কার্যকরের প্রতিবাদে পরিবহন শ্রমিকরা গতকাল বুধবার বেআইনিভাবে কর্মবিরতির নামে সারা দেশে বাস-ট্রাক চলায় বাধা দেয়, সাধারণ চালকদের হয়রানি করে, যাত্রীদের লাঞ্ছিত করে। এই পরিস্থিতিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রাতে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে রাত ১টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বৈঠকে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন তাদের ৯টি দাবিসহ আরো কিছু সমস্যা তুলে ধরে। এর মধ্যে যেগুলো যৌক্তিক মনে হয়েছে, সেগুলো সমাধানের ক্ষেত্রে তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। যেমন—বিদ্যমান লাইসেন্স নিয়ে তারা গাড়ি চালানোর জন্য সাত মাস অর্থাৎ ৩০ জুন পর্যন্ত সময় পাবে। এই সময়ের মধ্যে তারা বিআরটিএ থেকে নতুন লাইসেন্স ঠিকঠাক করে নেবে। মন্ত্রী জানান, এ রকম আরো দু-একটি বিষয়ে তাদের সময় দেওয়া হয়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা কর্মবিরতি কাল থেকে প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাসভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক শেষে শ্রমিক নেতারও বৈঠকের ফলাফল নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।

গতকাল রাত ৯টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠকে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম এবং বিআরটিএ কর্মকর্তারাও ছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘট আহ্বানকারী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতাদের মধ্যে বৈঠকে ছিলেন রুস্তম আলী খান, তাজুল ইসলাম, মকবুল আহমেদসহ অন্তত ১০ জন। বাস মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহও ছিলেন বৈঠকে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আইনটি সংশোধনের জন্য পরিবহন নেতারা দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি সুপারিশ আকারে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

গাড়ির মালিকরা ফিটনেস ও কাগজপত্র হালনাগাদ না করায় যে জরিমানা করা হয় তা তারা ঠিকমতো পরিশোধ না করায় প্রায় চার গুণ বেড়েছে। এই জরিমানার বিষয়টি বিবেচনার জন্য তাদের দাবিটিও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ৩০ জুনের মধ্যে মেনে নেবে বলে নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।

এর আগে সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি ও বাধার কারণে পণ্য ও জরুরি জ্বালানি পরিবহন বন্ধ হয়ে পড়ে দেশজুড়ে। আগের দিন ২০টি জেলায় বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও গতকাল সকালে তা ৩০ জেলায় বিস্তৃত হয়ে যায়। সড়ক যোগাযোগে নামে বিপর্যয়।

কাঠেরপুল এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে জরুরি কাজে মতিঝিল যাওয়ার জন্য প্রাইভেট কারে ডেমরা-কাজলা-যাত্রাবাড়ী সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন শান্ত নূর। তখন সকাল প্রায় ১১টা। শান্ত নিজেই লাল রঙের গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। তখন তাঁর সামনের গাড়িগুলোয় পোড়া মবিল ছিটাচ্ছিল একদল তরুণ। তাদের বয়স সর্বোচ্চ ১৮ হবে। শান্তর গাড়ির সামনে এসে ২০-২৫ জন গাড়িতে লাথি দিয়ে জানালা খোলার জন্য চাপ দিচ্ছিল। তাদের হাতে ছিল পোড়া মবিল। শান্ত রোষানল থেকে মুক্তি পেতে বাধ্য হয়ে তাঁর ডান দিকের জানালা খোলেন, তখন বেপরোয়া তরুণরা তাঁর মুখে পোড়া মবিলের কালি লাগিয়ে দেয়।

সাধারণ চালকদের হয়রানি করে, যাত্রীদের লাঞ্ছিত করে শুধু এ সড়কেই নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন মহাসড়কেও তাণ্ডব চালানো হয় টায়ার জ্বালিয়ে, গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে, রাস্তায় আড়াআড়ি বাস রেখে অবরোধ তৈরি করে। কয়েকটি স্থানে ট্রাক শ্রমিকরা বাসের হেলপার-চালকদের মারধর করে। তবে প্রশাসন এ সন্ত্রাস বন্ধে বেশির ভাগ স্থানেই নীরবতা পালন করে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন মহাসড়ক ও রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় পরিবহন শ্রমিকরা অবরোধ দেয়। টায়ার জ্বালিয়ে, অন্য গাড়িচালকের চাবি কেড়ে নিয়ে চালায় তাণ্ডব। লাঠি বাহিনী নামানো হয়। দলবদ্ধ হয়ে তারা প্রাইভেট কারের চালকদের মুখে কালি লেপন করে। কোথাও বাস চলাচলে বাধা দিয়ে, আবার কোথাও রাস্তায় বাস আড়াআড়ি রেখে অবরোধ তৈরি করে অরাজকতা তৈরি করা হয়। তবে প্রশাসন এই সন্ত্রাসের মাধ্যমে যাত্রী হয়রানি বন্ধে বেশির ভাগ স্থানেই নীরবতা পালন করে। কর্মবিরতি বন্ধ রাখতে খুলনা, কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি জেলা প্রশাসন তৎপর থাকলেও অন্যত্র প্রশাসনের তৎপরতা নিয়ে পরিবহন নেতারাও প্রশ্ন তুলেছেন।

চট্টগ্রাম নগরের কয়েকটি রুটে বহিরাগতদের দাপট দেখা যায়। সেই সঙ্গে বেশ কিছু শিশু-কিশোরকেও দেখা যায় পিকেটিং করতে। হাফপ্যান্ট, গেঞ্জি পরা ওই শিশু-কিশোরের পাশাপাশি জিন্সের প্যান্ট পরা ও মুখোশ পরা লোকজনও ছিল। তাদেরকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারাও। সরেজমিনে নগরের বন্দর সংযোগ সড়ক, জাকির হোসেন সড়ক, দেওয়ানহাট থেকে হালিশহর বিশ্বরোড, আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের হালিশহর বড়পোল সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, ধর্মঘটে রাস্তায় থাকা বেশির ভাগই শ্রমিক নয়।

‘স্বেচ্ছা কর্মবিরতিতে’ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরের ২০ জেলায় আগের দুই দিন বাস বন্ধ ছিল। গতকাল এর সঙ্গে শুরু হয় ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের চালকদের কর্মবিরতি। বাংলাদেশ ট্টাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ পণ্য পরিবহনে এ ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছিল আগের দিন মঙ্গলবার। গতকাল ট্রাকচালকদের অবরোধ-তাণ্ডবে বাস চলাচলও বন্ধ থাকা আগের দিনের চেয়ে আরো অনেক জেলায় বিস্তৃত হয়। মহাসড়কে অচলাবস্থায় জরুরি যাত্রাও বাতিল করে লাখো যাত্রী। অনেকে ট্রেনের ছাদে চড়ে বা দাঁড়িয়েও গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়। ঢাকা-মাওয়া রুটেও পরিবহন চালকরা কর্মবিরতি পালন করেন। তবে দুপুর ২টায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ডে অবস্থানরত পরিবহন শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিলে সে পথে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এদিকে সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুপুরে নোয়াখালীতে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পরিবহন ধর্মঘটকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা শাস্তির ভয়ে জনগণকে শাস্তি দেবেন না। জনগণকে দুর্ভোগে ফেলবেন না প্লিজ।’

ঢাকায় সকাল থেকে বিভিন্ন জেলার বাস ঢুকতে ও বের হতে বাধা দেওয়া হয় কাঁচপুর, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, আমিনবাজার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে। বাইরে থেকে গাড়ি ঢুকতে পারেনি ঢাকায়। বিভিন্ন পরিবহন মালিক সমিতি সূত্র জানায়, বাস ও মিনিবাসের ৮০ শতাংশই নামানো হয়নি। এর নেপথ্যে ছিলেন পরিবহন মালিকরা। ফলে ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহনের তীব্র সংকটে ভুগতে হয় গণমানুষকে। হেঁটে, পিকআপ বা ভ্যানে চড়ে কর্মজীবী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণির যাত্রীরা চলাচল করে। সদরঘাট, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, কারওয়ান বাজার, সাতরাস্তা, মিরপুর, মহাখালী, ফার্মগেট, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, কল্যাণপুর, গাবতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ীর স্থানে স্থানে যাত্রীজট লেগে যায়।

বিকেলে মিরপুরের শিয়ালবাড়ী থেকে বিশ্বরোড যেতে বাস না পেয়ে উবারের ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কারে ওঠেন ফাহিম সিদ্দিকী। বাসে যেখানে ২৫ টাকা ভাড়া দিতে হয় সেখানে তাঁর পকেট থেকে দিতে হয়েছে ৩২৫ টাকা। সকালে রামপুরা ব্রিজের ওপর দাঁড়ানো যাত্রীরা কিছু সময় পর কোনো বাস দেখলে তাতে কোনো রকমে পা রাখতে হামলে পড়ছিল। ভিড় ঠেলে বাসে উঠতে না পেরে শেষে পিকআপে উঠে মতিঝিলের দিকে ছুটছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল হাই। বললেন, সব বাস বন্ধ কইরা দিল নাকি? বিভিন্ন স্থানে অ্যাপভিত্তিক চালকরা ভিড় করেন। অসহায় যাত্রীদের কাছ থেকে তাঁরা মৌখিক চুক্তিতে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করেন। সকাল সাড়ে ৮টায় সায়েদাবাদ থেকে বাস না পেয়ে ভ্যানে মগবাজারে যান আলী হোসেন।

বলাকা পরিবহনের বাস থেকেও যাত্রীদের টেনে নামানো হচ্ছিল মগবাজারে। ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় আসমানি পরিবহনের পর পর চারটি বাস থামিয়ে দেয় ট্রাক শ্রমিকরা। তারা বাসের চাবি ছিনিয়ে নেয় চালকদের কাছ থেকে। সাইনবোর্ড ও যাত্রাবাড়ী থেকে ঢাকামুখো বাস ঢুকতে দেয়নি। গুলিস্তান-গাজীপুর রুটের বাস গাজীপুরে আটকে দেওয়া হয়। শ্রমিকদের পিকেটিংয়ের তাণ্ডবে সকালে বের হওয়া কিছু বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরের বাস চলাচলও বন্ধ ছিল। ভোরে সায়েদাবাদে রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে তাণ্ডব চালায় পরিবহন শ্রমিকরা। সায়েদবাদ বাস টার্মিনালে বাইরের জেলার বাস ঢুকতে দেওয়া হয়নি। একইভাবে গাবতলী, মহাখালী ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। মহাখালী বাস টার্মিনালে গেলে সকালে দেখা যায়, সেখান থেকেও বাস ছাড়ছে না। গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার দিকে বাস ছাড়া হলেও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাসগুলো জেলায় জেলায় আটকে রাখে। পটুয়াখালী যাওয়ার জন্য সাকুরা পরিবহনের বাস চলছে কি না জানতে গিয়ে যাত্রী নাবিল আহমেদ গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখেন, কোনো কাউন্টার কর্মীই বলতে পারছেন না কখন বাস চলবে। ফরিদপুর যাওয়ার জন্য সূর্যমুখী পরিবহনের বাস ধরতে সকাল ১১টায় টার্মিনালে গিয়ে যাত্রী আয়নাল মিয়া জানতে পারেন, বাস ছাড়বে বিকেল ৩টায়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার আলেখারচরে ট্রাক শ্রমিকরা বাসের হেলপার ও চালকদের মারধর করে। বাস আটকে রাখে। সকাল থেকে কুমিল্লার বিভিন্ন অংশে শ্রমিকরা অবস্থান নেয়। দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আলেখারচরে অবরোধ থাকে শ্রমিকদের। কুমিল্লায় রেসকোর্সে রেলওয়ে ওভারপাসের সামনে ও পদুয়ার বাজার রেল ওভারপাসের নিচে শ্রমিকরা জমায়েত হয়, বিক্ষোভ করে। দুপুর ১টার দিকে পুলিশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থানরত শ্রমিকদের সরিয়ে দিলে আলেখারচরে আটকে পড়া যান চলাচল শুরু হয়। দুপর ২টায় পদুয়ার বাজারে শ্রমিকরা যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাস ও বিভিন্ন যান নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, মদনপুর ও ডেমরায় আটকাচ্ছিল শ্রমিকরা। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর, ইচাইল, কর্ণী, শুভুল্যা ও কদিম ধল্যায় যাত্রীরা বাসের অপেক্ষায় ছিল দিনভর। টাঙ্গাইল থেকে ঢাকাগামী বাস চলেনি। যাত্রীরা বিকল্প হিসেবে ভেঙে ভেঙে লেগুনা, অটোরিকশায় চলাচল করে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর, গাজীপুর, ময়মনসিংহের মাসকান্দা আন্ত জেলা বাস টার্মিনাল, পাটগুদাম ব্রিজ ও উত্তরবঙ্গ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়েনি। বিভিন্ন জেলা থেকে ময়মনসিংহেও বাস ঢোকেনি। টঙ্গী স্টেশন রোডে সকাল ৯টায় একদল পরিবহন শ্রমিক লাঠি হাতে অবস্থান নেয়। সালনা, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, মির্জাপুর মাস্টারবাড়ি, ভবানীপুর, মাস্টারবাড়ি, মাওনায় বাসযাত্রীরা বাস পায়নি। কুষ্টিয়ায় বাসের সঙ্গে ছিল ট্রাক ধর্মঘটও। দূরপাল্লার ঢাকাগামী বাস চলেনি। মজমপুরে বাস কাউন্টারগুলোয় ভিড় করে পরে ফিরে যায় যাত্রীরা।

ঢাকা-নীলফামারী রুটে বাস চলেনি। নীলফামারী জেলা শহরের গাছবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে আমিনুল ইসলাম বলেন, বাস না চলায় ডোমার থেকে ২৫ কিমি ইজি বাইকে করে জেলা শহরে এসেছি। জেলা শহরের বাস টার্মিনাল দুপুর ২টায় ছিল ফাঁকা। রাজশাহীতে বেশির ভাগ রুটে বাস চলেনি। সকাল থেকে জেলার সঙ্গে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকে। মহানগরীর সাহেববাজার, শালবাগান ও স্টেশন এলাকায় ট্রাক শ্রমিকরা অবস্থান করছিল। তারা জেলার বাইরে যায়নি। বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকে ঢাকা-শরীয়তপুর রুটেও। হবিগঞ্জে বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধের জেরে বিপাকে পড়ে যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। বেনাপোলে চলে ট্রাকসহ সব ধরনের পণ্য পরিবহনের ধর্মঘট। দেশের সর্ববৃহৎ এখানকার স্থলবন্দরে ভয়াবহ ট্রাক সংকট দেখা দেয়। বেনাপোল বন্দরে আমদানীকৃত পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ ছিল। পণ্য পরিবহন করতে পারেনি আমদানিকারক এজেন্টরা। যশোরে ১৮টি রুটে বাস ধর্মঘটের ফলে যাত্রীরাও দুর্ভোগে পড়ে। নড়াইলের লোহাগড়া থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল আগে থেকে।

আজ ঢাকায় পরিবহন শ্রমিকদের সভা : বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের দুই দিনের বর্ধিত সভা আজ বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হচ্ছে। সেগুনবাগিচার স্বাধীনতা হলে অনুষ্ঠেয় এ সভায় কমপক্ষে ৭০০ পরিবহন শ্রমিক নেতা অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। তিনি ডেমরা সড়কে সাধারণ চালকদের মুখে ও গাড়িতে পোড়া মবিল মাখানোর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ধর্মঘট প্রকাশ্যে আহ্বানকারী ট্রাক শ্রমিক নেতারা এটি করিয়েছেন। এ জন্য পুলিশ দুজনকে আটক করেছে বলে আমরা জানি। গত বছরও পণ্য পরিবহন ধর্মঘটকারীরা যাত্রীদের মুখে কালি লাগিয়েছিল।’

সারা দেশে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ পণ্য পরিবহনের যান বন্ধ রাখার ঘোষণা দানকারী বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. রুস্তম আলী খান অবশ্য বলেন, ‘আমাদের কোনো সংগঠন এ ধরনের কাজ করেনি। ’

(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন কালের কণ্ঠ’র সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিবেদক/প্রতিনিধিরা)

Comments (০)
Add Comment