খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে দেশব্যাপী বিএনপি’র সমাবেশ শনিবার

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। আগামী ২৩ নভেম্বর শনিবার দেশের প্রতিটি জেলা ও মহানগরে এ কর্মসূচি পালিত হবে বলে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে- আগামী ২৩ নভেম্বর ২০১৯ শনিবার বিএনপি’র উদ্যোগে ঢাকাসহ দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন দুপুর ২টায় ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হবে নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে।

এছাড়া বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের ৫৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামীকাল ২০ নভেম্বর বুধবার ঢাকাসহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়গুলোতে তার দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় আগামী ২১ নভেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে সকাল ১১টায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পায়ে হেঁটে আদালতে যাওয়া বেগম জিয়ার হাত-পা এখন বেঁকে গেছে। প্রিজন সেলে বন্দি থাকায় হাত-পায়ের ব্যথা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে, জয়েন্টগুলোতে প্রচন্ড ব্যথার কারণে নিজে উঠে দাঁড়াতে পারছেন না, সোজা হয়ে বসতেও পারছেন না। এমনকি নিজের হাতে তুলে খেতেও পারছেন না। স্বাস্থ্যের এতোটাই অবনতি হয়েছে যে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পঙ্গু হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ তাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীর স্বাস্থ্যের অবনতিতে চরমভাবে উদ্বিগ্ন। জনগণের সেন্টিমেন্ট অবজ্ঞা সরকার দেশের একজন জনপ্রিয় নেত্রীর জীবনকে নিঃশেষ করে দেয়ার সকল আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছে। তাঁর চিকিৎসার অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই সরকার অন্ধ প্রতিহিংসার বশে বেগম খালেদা জিয়াকে ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেই তাঁর সুচিকিৎসা প্রদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তাঁর ন্যায্য প্রাপ্য জামিনে সরাসরি বাধা দেয়া হচ্ছে। নগ্নভাবে আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে অসত্য সংবাদ পরিবেশন করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা এক ভয়াবহ ও সুদুরপ্রসারী চক্রান্তের বর্ধিত প্রকাশ।

রিজভী বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনার টালবাহানায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হলে আপনার স্বনির্মিত দুঃশাসনের শৃঙ্খল ধুলোয় লুটোপুটি খাবে। তাই তাঁকে নিয়ে কোনো মিথ্যাচার-অপপ্রচার ও কুৎসা না রটিয়ে আজই মুক্তি দিন। জামিনে কোনো বাধা দিবেন না। তাঁর পছন্দমত হাসপাতালে তাঁকে সুচিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দিন।

প্রধানমন্ত্রীর দুবাই সফরের সমালোচনা করে রিজভী আরও বলেন, যখন দেশে চাল, পেঁয়াজ ও লবনের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্যের হাহাকার চলছে তখন প্রধানমন্ত্রী বিনোদনের জন্য দুবাইতে এয়ারশো উপভোগ করছেন। আর সত্যভ্রষ্ট ওবায়দুল কাদের সাহেবের রোডশো তো জনগণ প্রতিদিনই দেখছে। তিনি নতুন সড়ক আইনের দ্বারা যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তাতে জনদুর্ভোগ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সুতরাং অবৈধ সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সংকটের সুরাহা হতে থাকবে। কারণ তখন জবাবদিহিতার আওতায় আসবে সবকিছু। আজ দেশের তরুণ সমাজসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষকে রাজপথে নেমে আসতে হবে। দুনিয়ার দেশে দেশে তরুণরা সব স্বৈরাচারী সরকারগুলোকে পাল্টে দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়।

আদালতের রায়ে বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদের ১০ বছরের কারাদণ্ডই বহাল রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে অর্থদণ্ড হিসেবে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে আসামিদের।

২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলাটি করে।

Comments (০)
Add Comment