ঢাকায় বাস কম, দুর্ভোগ

সড়কের নতুন আইন সংশোধনের দাবিতে ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন বন্ধ। পরিবহন সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। সকাল থেকেই রাজধানীর বাসস্ট্যান্ডে, সড়কের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অনেকে রিকশায়, ভ্যানে বা বিকল্প পন্থায় কর্মস্থলে গেছেন।

সায়েদাবাদের ব্রাহ্মণচিরণ এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক আবদুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, বাস না পেয়ে তিনি বেলা ১১টায় সায়েদাবাদ থেকে রিকশায় থেকে মালিবাগ আসেন। সকাল থেকেই সায়েদাবা​দ থেকে কোনো বাস চলছে না। সকাল সাড়ে আটটায় তার সামনেই গাজীপুর থেকে আসা একটি বাস থেকে যাত্রীদের সায়েদাবাদ নামিয়ে দেওয়া হয়, যেটি যাওয়ার কথা ছিল নারায়ণগঞ্জ।

ঢাকার তিনটি বাস টার্মিনাল গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকেও দূরপাল্লার এবং আন্তজেলার বাস চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে।এর মধ্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট ও খুলনা অঞ্চলে বাস চলাচল বন্ধে সেখানে জনদুর্ভোগ বেশি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

পরিবহন মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সহ সভাপতি আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দূরপাল্লার সড়কে কিছু কিছু বাস পাঠাচ্ছি। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে বিভিন্ন জেলায় সেগুলো আটকা পড়ে ফিরতে পারছে না।’

আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, খুলনা, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালী, গাজীপুর, বগুড়া, কুমিল্লার দাউদকান্দিসহ বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী পরিবহন খুব কম। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে এমন দৃশ্য একেবারে বেমানান অন্তত সপ্তাহের কর্মব্যস্ত দিনের বেলায়। সকালের দিকে প্রায় প্রতিদিন একাধিক সংগঠনের ছোটখাটো সমাবেশ লেগেই থাকে প্রেসক্লাবের সামনে, আজও ছিল। এ সবের কারণে এখানে যানজটের সৃষ্টি হওয়া নৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু আজ রাস্তা প্রায় ফাঁকা। কিছুক্ষণ পর পর বাস আসছে, সেগুলোতে ভিড় নেই। নতুন সড়ক আইন কার্যকরের প্রতিবাদে আজ সারা দেশে যান চলাচল বন্ধ আছে।

রাজধানীর সঙ্গে অন্য জেলার যোগাযোগ প্রায় বন্ধ আছে। কর্মব্যস্ত এই দিনে সড়কে ছুটির আমেজের কারণ এটিই। প্রেসক্লাব থেকে মিরপুরগামী একটি বাসে চেপে দেখা গেল, সেখানেও বিশেষ ভিড় নেই।

একজন যাত্রী বললেন, অন্য জেলা থেকে মানুষ আসা বন্ধ হওয়ায় রাস্তা ফাঁকা। বাসটি চলছে অপেক্ষাকৃত বেশি গতিতে। সামনে কোনো গাড়ি নেই। অন্য দিন প্রেসক্লাব থেকে আসতে মৎস্য ভবনের পর থেকেই বড় যানজটে আটকে যায় গাড়ি। আজ বাসটি এক টানে চলে এল শাহবাগ পর্যন্ত। সেখানে এসে অবশ্য সিগন্যালে আটকে গেল। এরপর এক টানে বাংলামোটর। সেখান থেকে কারওয়ান বাজারে এসে মাঝারি মানের জট।

কার্যত অচল গাবতলী
পরিবহন ধর্মঘটের কারণে রাজধানীর বৃহত্তর বাস টার্মিনাল গাবতলী অনেকটা নিশ্চল হয়ে পড়েছে। সেখানে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে। বাস চলছে খুব কম।

যাত্রী তন্ময় বোস প্রথম আলোকে বলেন, গৌরনদীগামী হানিফ পরিবহনের বেলা সাড়ে ১২টার টিকিটি কিনেছেন। পৌনে দুইটা পর্যন্ত বাসের কোনো খবর নেই। পরিবহনের কাউন্টারে বসে আছেন।

আরেক যাত্রী শেখ নাজমুল ইসলাম বলেন, তিনি ফরিদপুর যাবেন। গাবতলী থেকে আধঘণ্টা পর পর সূর্যমুখী পরিবহনের বাস ছাড়ে। সাড়ে ১১টায় কাউন্টারে এসেছেন। শেষ পর্যন্ত বেলা দুইটার একটি বাসের টিকিটি পেয়েছেন। বাস ঠিক সময়ে ছাড়বে কি না, তিনি সে চিন্তায় আছেন।

সূর্যমুখী পরিবহনের ব্যবস্থাপক সানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাস কম ছাড়া হচ্ছে, তাই সময় ঠিক রাখা যাচ্ছে না।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক কমল জোহা খান ঘুরে দেখেছেন, গাবতলী টার্মিনাল দৃশ্যত সচল। বাস কাউন্টারগুলো খোলা। শ্রমিক-কর্মচারীরাও আছেন। কিন্তু বাস চলছে না।

গাবতলীয় ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, টার্মিনাল সচল। কিন্তু বাস অন্যদিনের তুলনায় কম ছাড়ছে।

Comments (০)
Add Comment