চুক্তির বিস্তারিত জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেবে বিএনপি

শনিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “ভারতে প্রধানমন্ত্রী যে চুক্তিগুলো সম্পাদন করে এসেছেন এই চুক্তিগুলো অবিলম্বে দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। আজকে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেব তথ্যগুলো জানানোর জন্য যে, কী ধরনের চুক্তি হয়েছে।

“একইসঙ্গে তথ্য অধিকার যে আইন আছে সেই আইনকে সামনে নিয়ে আমরা তথ্য কমিশনের কাছেও চিঠি দেব চুক্তির বিষয়গুলো জানার জন্য। কারণ আমরা মনে করি, এ চুক্তিগুলো সম্পর্কে দেশবাসীর মধ্যে অনেক জিজ্ঞাসা আছে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত রয়েছে। আপনারা জানেন যে, ফেনী নদীর পানি দেওয়ার বিষয়ে যে চুক্তি হয়েছে তাতে আমাদের পানি দিতে কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু আমাদের যে বড় সমস্যা তিস্তা নদীর পানি সদস্যা দীর্ঘকাল হয়ে গেল তার কোনো সমাধান হচ্ছে না।”

গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরে ভারতের সঙ্গে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা সই এবং তিনটি যৌথ প্রকল্প উদ্বোধন হয়। স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার এবং এলপিজি রপ্তানির সুযোগ দেওয়া নিয়ে দেশে সমালোচনা হয়।

‘ওবায়দুল কাদের কি চিকিৎসক?’

খালেদা জিয়া তেমন অসুস্থ নন যে তাকে বিদেশে নিতে হবে- ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা কেমন আছে, তা নিয়ে বলার অধিকার উনার নেই। কারণ উনি কি ডাক্তার? উনি ডাক্তার নন, তিনি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা বলছেন।”

খালেদার অবস্থা বিদেশে পাঠানোর মতো নয়: কাদের  

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে ‘মানবিক হওয়ার’ আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সাধারণ বন্দীরও সুচিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। যেখানে দেশনেত্রী একেবারে সুস্থ অবস্থায় কারাগারে গেছেন হেঁটে, সেখানে তিনি এখন বিছানা থেকে নিজে উঠতে পারেন না। এটা বাস্তবতা। সেই কারণে আমরা বলি, এ রকম মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অর্থই হচ্ছে প্রকৃত সত্য থেকে দূরে রাখা। যে কথাটা আমরা আশঙ্কা করছি, এভাবে দেশনেত্রীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য এই কাজগুলো তারা করছে।

“ওবায়দুল কাদের সাহেবের একথা বলায় আমরা একেবারে বিস্মিত হয়েছি। উনি যখন অসুস্থ হয়েছে তাকে আমরা হাসপাতালে দেখতে গেছি, তিনি বিদেশে গেছেন আমরা তার আশু মুক্তি কামনায় দোয়া করেছি।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালকের বিবৃতি ‘অসত্য’ দাবি করে বৈঠকে এর নিন্দা জানানো হয় বলে বিএনপি মহাসচিব জানান।

তিনি বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, তিনি প্রায় পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছেন। অলমোস্ট তিনি ক্রিটিকাল স্টেজে। এখন তিনি নিজে কিছুই করতে পারেন না, তাকে সহযোগিতা করতে হয়। এ বিষয়টাকে কেন হাসপাতালের পরিচালক গোপন করেছে, তা বোধগম্য নয়। আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের সঠিক তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।”খোকার জন্য দোয়া

ক্যান্সার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকা দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার জন্য দেশবাসীর দোয়া চেয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “আমাদের দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘকাল বিদেশে অবস্থান করছেন এবং দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অতি সম্প্রতি তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

“এখন তিনি হাসপাতালে, তিনি জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি। সভায় তার আশু রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করা হয়েছে এবং একইসঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে তার জন্য দোয়া করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

“একসঙ্গে অসুস্থ স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া ও আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানি শাহজাহান সিরাজ অত্যন্ত অসুস্থ- তাদেরও আশু রোগমুক্তি কামনা করা হয়েছে।”

‘রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর হবে নীতি পরিপন্থি’

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিরোধিতা করে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, “এটা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের নীতিবিরোধী। যেখানে আমরা সব সময় বলছি যে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে, সেখানে আপনারা আবার স্থায়ীভাবে তাদেরকে রাখার জন্য চরের মধ্যে গিয়ে চমৎকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এর অর্থ হচ্ছে যে, আমরা মেনে নিচ্ছি প্রকারান্তরে রোহিঙ্গারা এখানে থাকবে।

“আমরা মনে করি, এটা সম্পূর্ণ স্ববিরোধী। এই সিদ্ধান্ত মিয়ানমারের যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্যের দিকে সরকার যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি।”

‘বড় দুর্নীতিকে আড়ালে শুদ্ধি অভিযান’

চলমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ক্যাসিনো স্ক্যান্ডালসহ দুর্নীতির বিষয়ে যে শুদ্ধি অভিযান এটাকে সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা মনে করি যে, এটা (শুদ্ধি অভিযান) মূল দুর্নীতিকে অর্থাৎ জাতীয় দুর্নীতিকে আড়াল করার জন্য এই ছোট-খাটো দুর্নীতিগুলোকে সামনে নিয়ে এটাকে আড়াল করা হচ্ছে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সমগ্র জাতি আজকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। সরকারের লোকেরা সরাসরি এই দুর্নীতির সাথে জড়িত। আমরা মনে করি, দুর্নীতি দমন কমিশন তো সব সময় নিরপেক্ষ থাকে না। সেজন্য নিরপেক্ষ একটা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই দুর্নীতির তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।”

বিচারপতি নিয়োগ

হাই কোর্টে নয়জন বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বিচার বিভাগের যে নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা তা এখন নেই বললে চলে। ইতোমধ্যে নিয়োগ চলছে পুরোদমে।

“আমরা মনে করি যে, দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচারপতি নিয়োগ দিলে সুষ্ঠু বিচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বলে আমরা মনে করি না। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলীয় নিয়োগগুলো আরও বেশি করে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে বলে আমরা মনে করি।”  

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

Comments (০)
Add Comment