প্রভাবশালী ও সুন্দরী তরুণীদের মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার পাপিয়ার

অতিথি হয়ে থাইল্যান্ডে যাওয়া প্রভাবশালী ও বিদেশ থেকে যেসব তরুণী আসা-যাওয়া করতো, তাদের মাধ্যমেই অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমন।

রিমান্ডে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দাদের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারসহ এসব তথ্য স্বীকার করেছেন তারা।

থাইল্যান্ডে নিজের নামে থাকা বাড়িতেই অতিথিদের মনোরঞ্জনের নানা আয়োজন থাকতো। বাড়িটির নিচ তলাতেই রয়েছে সুমনের একটি মদের বার।

শুধু দেশেই নয়, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায়ও ‘পাপের আস্তানা’ গড়ে তুলেছেন পুলিশের রিমান্ডে থাকা পাপিয়া। দেশের বাইরে এসব আস্তানায়ও নিয়মিত যাতায়াত ছিল প্রভাবশালীদের।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক পাপিয়ার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র বলেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি তফসিলি ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইমের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে থাইল্যান্ডে দুটি এবং মালোয়েশিয়ার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাপিয়া-সুমন দম্পতির প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা জমা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

পাপিয়ার কানেকশনে বিদেশ থেকে যেসব তরুণী আসা-যাওয়া করত এবং দেশ থেকে যারা অতিথি হয়ে বাইরে যেতেন মূলত তাদের মাধ্যমেই কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন পাপিয়া ও তার স্বামী।

যাদের মাধ্যমে পাপিয়া দম্পতি অবৈধভাবে অর্থ পাচার করেছেন তাদের নামের তালিকা তৈরির কাজও শুরু করেছে সিআইডি।

জানতে চাইলে সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, পাপিয়ার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। আরও কিছু তথ্য বিভিন্ন সংস্থা থেকে আসবে। তার অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। পাপিয়া যা করেছেন তা অপরাধ- উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত। তবে যারাই জড়িত থাকুক সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, আটকের পর পাপিয়া-সুমন দম্পতির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে তিনটি মামলা করেছে তার মধ্যে একটি মানি লন্ডারিংয়ের ধারায়। সিআইডির সংশ্লিষ্ট শাখা এ মামলাটি তদন্ত করছে জানিয়ে তিনি বলেন, তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পরই পাপিয়া ও তার স্বামী সুমনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিগগিরই তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।

পাপিয়ার ব্যাংক হিসাব তলব ও অর্থ পাচার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। বিএফআইইউ থেকে ব্যাংকগুলোতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে- শামীমা নূর পাপিয়া, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৯৯২৬৮২৬০৬০১২০০০০৬৫।

পিতা, সাইফুল বারী, মাতা সেলিনা বারী, স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন বেগম পাপিয়ার অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু কেওয়াইসি (গ্রাহক পরিচিতি) ফর্ম, লেনদেনের প্রোফাইল এবং লেনদেনের সর্বশেষ তথ্যের সত্যায়িত ২ কপি বাংলাদেশ ব্যাংকে জানাতে হবে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কাজ করে আসছিলেন পাপিয়া। গত তিন মাসেই ওয়েস্টিনে ৩ কোটি টাকার বেশি বিল পরিশোধ করেছেন পাপিয়া।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের সময় পাপিয়া ও স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনসহ তাদের দুই সহযোগীকে আটক করে র‌্যাব-১।

Comments (০)
Add Comment